নাটালি ডোরমার (ইংরেজি: Natalie Dormer; জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২) হলেন একজন ইংরেজ অভিনেত্রী। তিনি ওয়েবার ডগলাস একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে পড়াকালীন ২০০৩ সালে শেকসপিয়রীয় কমেডি দ্য কমেডি অফ এররস-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার পেশাদারী অভিনয় জীবন শুরু করেন। লাসে হালস্ট্রোম পরিচালিত ক্যাসানোভা (২০০৫) চলচ্চিত্র দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তিনি শোটাইম চ্যানেলের দ্য টিউডর্স (২০০৭-২০০৮) ধারাবাহিকে অ্যান বলেইন চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন এবং দুইবার নাট্য ধারাবাহিকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জেমিনি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
২০১০ সালে তিনি ইয়ং ভিকে লাইবেলাই মঞ্চনাটকে এবং ম্যাডোনারডব্লিউ.ই. (২০১১) ছবিতে ইয়র্কের ডিউকেস এলিজাবেথ বয়েস-লিওন চরিত্রে, ও ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার (২০১১) ছবিতে প্রাইভেট লরেইন চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১২ সালে ইয়ং ভিকে আফটার মিস জুলি মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন। ডোরমার এইচবিওর মহাকাব্যিক কল্পনাধর্মী ধারাবাহিক গেম অব থ্রোনস (২০১২-২০১৬) এ মার্জারি টাইরেল চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে অন্যান্য কুশীলবদের সাথে যৌথভাবে নাট্য ধারাবাহিকে অনন্য কলাকুশলী বিভাগে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া তিনি সিবিএস চ্যানেলের এলিমেন্টারি (২০১৩-১৫) ধারাবাহিকে আইরিন অ্যাডলার চরিত্রে, বিজ্ঞান কল্পকাহিনীধর্মী রোমাঞ্চকর দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে - পার্ট ১ (২০১৪) ও পার্ট ২ (২০১৫) ছবিতে ক্রেসিডা চরিত্রে এবং দ্য ফরেস্ট (২০১৬) ছবিতে সারা প্রাইস/জেস প্রাইস চরিত্রে অভিনয় করেন।
প্রারম্ভিক জীবন
ডোরমার ১৯৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বার্কশায়ারের রিডিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার মায়ের নাম সামান্থা। তিনি তার সৎপিতার পিতার পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার একজন ভাই আছে, নাম মার্ক।[২] তিনি নরওয়েজীয়[৩] এবং ওয়েলশ বংশোদ্ভূত।[৪]
ডোরমার চিল্টার্ন এজ সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং পরে রিডিং ব্লু কোট স্কুলে ভর্তি হন। রিডিং ব্লু স্কুল মূলত ছেলেদের স্কুল, যেখানে মেয়েদের ষষ্ট শ্রেণি থেকে ভর্তি করানো হয়।[২] তার স্কুলের জীবনে তিনি বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন কিন্তু তিনি এখনো বুঝতে পারেন না কেন তার সাথে এমন করা হত।[৫] স্কুলে তিনি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন, স্কুলের নেটবল দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন এবং উপস্থিত বক্তৃতা দলের হয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন।[৬] স্কুল জীবনে তিনি অ্যালেনোভা স্কুল অব ড্যান্সিংয়ে নাচের তালিম নিয়েছেন।[৭] তিনি তার এ-লেভেলের ইতিহাস পরীক্ষায় "এ" গ্রেড না পাওয়ায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ নষ্ট করেন।[৫] ডোরমার পরে নাট্য স্কুলে অডিশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ওয়েবার ডগলাস একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টে অভিনয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।[২][৮]
কর্মজীবন
ওয়েবার ডগলাস একাডেমি থেকে পাস করার ছয় মাস পরে ডোরমার ক্যাসানোভা (২০০৫) চলচ্চিত্রে ভিক্টোরিয়া চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হন।[১] এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। পরিচালক লাসে হালস্ট্রোম তার হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের মুগ্ধ হয়ে গল্প লেখককে দিয়ে তার চরিত্রের অংশ আরও বৃদ্ধি করান।[১] এই চলচ্চিত্রে অডিশনে এবং চলচ্চিত্রের তার কাজের জন্য তিনি টাচস্টোন পিকচার্সের আরও তিনটি চলচ্চিত্রের জন্য নির্বাচিত হন, পূর্বে এই চর্চা এই প্রযোজনা সংস্থার ছিল না।[২][৮] একই বছর তিনি ডিসট্যান্ট শোরস ধারাবাহিকের প্রথম পর্বে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। ক্যাসানোভা চলচ্চিত্রের নির্মাণ পরবর্তী সময়ে ডোর্মার দশ মাস কাজের বাইরে ছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন, যা অর্থ সংকটের কারণে মুক্তি পেতে দেরি হয়। এই সময়ে তিনি তার নিজের ভরণপোষণের জন্য খাদ্য পরিবেশন ও ডেটা এন্ট্রির কাজ করেন।[১][৯] তিনি বলেন তার এই দীর্ঘ দিন কাজ থেকে দূরে থাকা ছিল তার কর্মজীবনের শুরুর প্রথম ১২ মাসের সেরা শিক্ষা।[৬]
২০০৭ ও ২০০৮ সালে ডোরমার দ্য টিউডর্স ধারাবাহিকের প্রথম দুই মৌসুমে অ্যান বলেইন চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার অভিনয় উচ্চ প্রশংসিত হয়। এলএ উয়িকলির রবার্ট অ্যাবেল লিখেন, "নাটালি ডোর্মার তার অ্যান বলেইন চরিত্রটিকে শিল্পীর তুলির মত সুন্দরভাবে তোলে ধরেছেন... তার মায়াবী ও সময়কে থমকে দেওয়ার মত সৌন্দর্য দ্য টিউডর্স-এর প্রাণ।"[১০] দ্বিতীয় মৌসুমে তার চরিত্রের মৃত্যুর পর দ্য বোস্টন হেরাল্ড-এ উল্লেখ করা হয়, "ডোর্মার অ্যান বলেইনকে প্রাণ দিয়েছিল, তাকে শুধু সুন্দরী ষড়যন্ত্রকারীই নয়, তাকে বিপ্লবী ও উদ্ধত বিয়োগান্তক বীরও করে তুলেছিল... দ্য টিউডর্স থেকে তার চলে যাওয়া অসীম শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।"[১১]
২০০৮ সালে ডোরমার অগাথা ক্রিস্টিস মার্পল ধারাবাহিকের হোয়াই ডিন্ট দ্য আস্ক ইভানস? পর্বে এবং ফেন্স ওয়াকার ও সিটি অব লাইফ চলচ্চিত্রের অভিনয় করেন। একই বছর তিনি ইনসেন্ডিয়্যারি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, কিন্তু মূল ছবি থেকে তার অভিনীত অঙ্ঘস বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।[২] ২০১০ সালের মার্চে লন্ডনের ইয়ং ভিক থিয়েটারে তার মঞ্চনাটকে অভিষেক হয়। সেখানে তিনি লাইবেলাই নাটকে মিজি চরিত্রে অভিনয় করেন। দি অবজারভার-এর মঞ্চ সমালোচক সুজান্নাহ ক্ল্যাপ অভিনয়শিল্পীদের কাজের প্রশংসা করে লিখেন, "নাটালি ডোরমার কোমল এবং তার মাথার টুপি রাখার জন্য পুরো দাবা খেলাকে সরিয়ে দিয়েছে।"[১২] মিজি চরিত্রে অভিনয় করার ছয় মাস পর তিনি ম্যাডোনারডব্লিউ.ই. ছবিতে ইয়র্কের ডিউকেস এলিজাবেথ বয়েস-লিওন চরিত্রে, ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার ছবিতে প্রাইভেট লরেইন চরিত্রে এবং বিবিসির নাট্যধর্মী সিল্ক ধারাবাহিকে নিয়াম ক্রানিচ চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্য টিউডর্স ধারাবাহিকের চতুর্থ ও চূড়ান্ত মৌসুমে একটি স্বপ্নের অংশে পুনরায় অ্যান বলেইন চরিত্রে আবির্ভূত হন।[১৩]
ডোরমার ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এইচবিওর মহাকাব্যিক কল্পনাধর্মী ধারাবাহিক গেম অব থ্রোনস-এ মার্জারি টাইরেল চরিত্রে অভিনয় করে।[১৪][১৫] ষষ্ঠ মৌসুমে তার করা মার্জারি টাইরেল চরিত্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই ধারাবাহিকে তার অংশ শেষ হয়। তিনি তার কাজের জন্য এই ধারাবাহিকের অন্যান্য কুশীলবদের সাথে যৌথভাবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সেরা কলাকুশলীদের জন্য স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং ২০১৫ সালে এম্পায়ার হিরো পুরস্কার লাভ করেন। এই ধারাবাহিকের তৃতীয় মৌসুমে তার অভিনয়ের জন্য তিনি নাট্য ধারাবাহিকে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ইউয়ি পুরস্কার লাভ করেন।[১৬]
২০১২ সালের মার্চে তিনি পুনরায় ইয়ং ভিকের মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। তিনি প্যাট্রিক মার্বারের আফটার মিস জুলি মঞ্চনাটকে নাম ভূমিকায় আবির্ভূত হন।[১৭] তার এই কাজ প্রশংসিত হয় এবং "কিছুটা অনুভূতিপ্রবণ",[১৮] "অসাধারণ",[১৯] এবং "পরিপূর্ণ মিস জুলি"[২০] বলে উল্লেখ করা হয়। অনলাইন থিয়েটার ম্যাগাজিন এক্জিউন্ট লিখে, মিস জুলি চরিত্রে তার কাজে ক্রোধ, আকাঙ্ক্ষা, বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্য, আনন্দ, বিশৃঙ্খলা ও হতাশা রয়েছে... ডোরমার এখনো তার পর্দায় উপস্থাপনার চেয়ে বেশি সুন্দর এবং তার চরিত্রকে যৌন আবেদনময়ী, শিশুসুলভ ও পীড়াদায়ক রূপ প্রদান করেছেন।"[২১] ২০১৩ সালের মার্চে তিনি নিল গাইম্যানের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত রেডিও নাটক নেভারহোয়ার-এ লেডি ডোর চরিত্রের জন্য কণ্ঠ দেন। একই বছর তিনি সিবিএস চ্যানেলের এলিমেন্টারি ধারাবাহিকের প্রথম মৌসুমের শেষ তিনটি পর্বে এবং দ্বিতীয় মৌসুমে আইরিন অ্যাডলার চরিত্রে অভিনয় করেন।[২২] এই বছরের শেষের দিকে তিনি কার রেসিং নাট্যধর্মী রাশ, থ্রিলারধর্মী দ্য কাউন্সেলর এবং নাট্যধর্মী আ লং ওয়ে ফ্রম হোম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরের দুই বছরে তিনি বিজ্ঞান কল্পকাহিনীধর্মী রোমাঞ্চকর দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে - পার্ট ১ (২০১৪) ও পার্ট ২ (২০১৫) ছবিতে ক্রেসিডা চরিত্রে আবির্ভূত হন।[২৩] এই চরিত্রের প্রস্তুতি হিসেবে তিনি তার মাথার বাম পাশের চুল কামিয়ে ফেলেন।[২৪]
২০১৫ সালের আগস্টে বিবিসিতে প্রচারিত হয় তার অভিনীত দ্য স্ক্যান্ডেলাস লেডি ডব্লিউ। এটি ইতিহাসবেত্তা হ্যালি রুবেনহোল্ড রচিত লেডি ওর্সলিস হুইম বই অবলম্বনে নির্মিত, যেখানে ডোরমার অষ্টাদশ শতাব্দীর অভিজাত নারী সেম্যুর ওর্সলি চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৫][২৬][২৭] ডোরমার লাভা বিয়ার ফিল্মস ও ডেভিস এস গয়ার প্রযোজিত অতিপ্রাকৃত থ্রিলারধর্মী দ্য ফরেস্ট ছবিতে সারা প্রাইস/জেস প্রাইস চরিত্রে অভিনয় করেন।[২৮] ছবিটি পরিচালনা করেন একাধিক পুরস্কার বিজয়ী মিউজিক ভিডিও ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালক জ্যাসন জাডা। এটি ছিল তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র।[২৯] ফোকাস ফিচার্স ছবিটির উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের পরিবেশনার দায়িত্বে ছিল এবং তারা ছবিটি ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি দেয়।[৩০][৩১]
ব্যক্তিগত জীবন
২০১১ সাল থেকে ডোরমারের চলচ্চিত্র পরিচালক অ্যান্থনি বাইর্নের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। বাইর্নের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০৭ সালে দ্য টিউডর্স ধারাবাহিকের চিত্রায়নের সময় ডাবলিনে।[৫] ডোরমার বলেন একজন অভিনেত্রী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করার অনুপ্রেরণা হলেন কেট ব্লানচেট।
গুজব রয়েছে যে নাটালি ডোরমার ইংল্যান্ডের প্রথম মেরির রাজসভার জেন ডোরমারের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রসঙ্গে নাটালি বলেন, "জেন ডোরমার নামে রাজসভায় একজন মহিলা ছিলেন এবং তার পারিবারিক নাম ও আমার পারিবারিক নাম একই, কিন্তু আমি মনে করি তা সম্ভব নয়।"[৩২]
↑"Past Pupils" (ইংরেজি ভাষায়)। Allenova School of Dance। ১৮ জুলাই ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭। and spent two years with Starmaker Theatre Company, both performing in a number of shows and being choreographer for a Starmaker review.
↑ কখBamigboye, Baz (১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Casanova girl won me over"। ডেইলি মেইল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
Armstrong, S (৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "She won't lose her head"। The Sunday Times। London। ১৭ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০০৭।