নরেন্দ্র দীপচাঁদ হিরওয়ানি (সিন্ধি: نريندر هرواڻي; জন্ম: ১৮ অক্টোবর, ১৯৬৮) উত্তরপ্রদেশের গোরখপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেট তারকা। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। দলে তিনি মূলতঃ লেগ স্পিন বোলাররূপে ভূমিকা রাখতেন। পাশাপাশি ডানহাতে নিচের সারির কার্যকরী ব্যাটসম্যান ছিলেন নরেন্দ্র হিরওয়ানি। টেস্ট অভিষেকে ব্যাপক সাফল্য লাভের প্রেক্ষিতে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
প্রারম্ভিক জীবন
গোরখপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তিনি। শৈশবে ইন্দোরে চলে যান। মধ্যপ্রদেশের ক্রিকেটার সঞ্জয় জাগডালের তত্ত্বাবধানে মাঠের কাছাকাছি একটি কক্ষে থাকতেন। ১৬ বছর বয়সে মধ্যপ্রদেশের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। খেলায় তিনি পাঁচ উইকেট দখল করেছিলেন। পরের মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরের ক্রিকেটে ৩ টেস্টে ২৩ উইকেট পান। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-২৫ দলের সদস্য হিসেবে প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসের ৬ উইকেটের সবগুলোই তার দখলে ছিল। ফলশ্রুতিতে টেস্ট দলে খেলার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
জানুয়ারি, ১৯৮৮ সালে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত ও চতুর্থ টেস্টে তার অভিষেক হয়। প্রথম ইনিংসে ৮/৬১ পান।[১] এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য ৪১৬ রানে ধাবিত হয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হন ও উইকেট-রক্ষক কিরণ মোরে পাঁচ স্ট্যাম্পিং করেন। ঐ ইনিংসে ৮/৭৫ পান ও টেস্টে সর্বমোট ১৬/১৩৬ তোলেন।[২] এরফলে বিশ্বের চতুর্থ বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টের এক ইনিংসে আট উইকেট লাভের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। এছাড়াও তার এ বোলিং পরিসংখ্যান নভেম্বর, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিং পরিসংখ্যানরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।[৩] তার পূর্বে অস্ট্রেলীয় বোলার বব ম্যাসি জুন, ১৯৭২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ৮/৮৪ ও ৮/৫৩ পেয়েছিলেন।[৪] এছাড়াও ম্যাসির গড়া ১৬/১৩৭ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে যায়। কিন্তু তারা উভয়েই তাদের অভিষেক টেস্টের উভয় ইনিংসে আট উইকেট করে পেলেও পরবর্তীকালে খেলায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি।
কয়েকমাস পর শারজায় অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় তিন খেলায় ১০ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার পান। পরের বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টের সিরিজে তিনি ২০ উইকেট এবং তার সঙ্গী আরশাদ আইয়ুব ২১ উইকেট তুলে নেন। তার প্রথম চার টেস্টে ৩৬ উইকেট লাভ যে-কোন বোলারের জন্য সেরা সাফল্যরূপে বিবেচিত। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনি দারুণভাবে ব্যর্থ হন। এমনকি পোর্ট অব স্পেনের স্পিনারদের সহায়ক পিচেও তিনি তেমন সফলতা লাভ করতে পারেননি। ১৯৯০ সালে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাধারে ৫৯ ওভার বোলিং করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন যা অদ্যাবধি টিকে রয়েছে।[৫] তবে, ১৯৯১-৯২ মৌসুমে বিশ্ব সিরিজ কাপের শেষ খেলায় ব্রায়ান লারা ও রিচি রিচার্ডসনকে আউট করেন। কিন্তু তার এ সাফল্য বিশ্বকাপে খেলার উপযোগী করতে পারেনি।
অবসর
২০০৫-০৬ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে রঞ্জি ট্রফি প্রতিযোগিতায় মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ