ধর্মসভা হচ্ছে রাধাকান্ত দেবের তত্ত্বাবধানে ১৮৩০ সালের জানুয়ারিতে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত একটি গোঁড়া হিন্দু সংগঠন। এটি মূলত রাজা রামমোহন রায়, হেনরি ডিরোজিওর মতো সংস্কারকদের নেতৃত্বে কুসংস্কার-অন্ধবিশ্বাসের বিপরীতে চলমান সামাজিক সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জীবন্ত হিন্দু নারীদের পুড়িয়ে মারার বর্বর সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকদের প্রণীত বঙ্গ সতী প্রবিধান, ১৮২৯ নামক আইনের বিরুদ্ধে মতামত তুলে ধরে এই সংগঠন। তাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের যেকোনো রীতিনীতির উপর যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রবল বিরোধিতা করে।[১] ধর্মসভা প্রিভি কাউন্সিলে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সতীদাহ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি আপিল দাখিল করে। তাদের মতে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় জর্জের হিন্দু ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়েছিল এই আইন। তবে তাদের আপিল প্রত্যাখ্যান করে ১৮৩২ সালে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়।[২][৩]
সংগঠনটি তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সমাচার চন্দ্রিকা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করত। এসময় তারা বহু গোঁড়া হিন্দু ও সরকারের উপর অসন্তুষ্ট ধনী জমিদারের সমর্থন লাভ করে।[৪]
এখানেই থেমে না থেকে এই ধর্মসভা পরবর্তীতে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন, ১৮৫৬ এর বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রস্তাবের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি স্বাক্ষরসহ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন জমা দেয়। সংগঠনটি আইনটিকে প্রচলিত হিন্দু রীতিনীতির একটি স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করেছিল।[৫][৬] তবে এত বিরোধিতা সত্ত্বেও লর্ড ডালহৌসি ব্যক্তিগতভাবে বিলটি চূড়ান্ত করেন এবং লর্ড ক্যানিং তা পাশ করেন।[৭][৮]
তথ্যসূত্র