দীর্ঘস্থায়িত্ব বলতে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য কোনও মানব সম্প্রদায়, তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতি টিকে থাকার ক্ষমতাকে বোঝায়। অর্থাৎ এমনভাবে মানবজাতির বর্তমান চাহিদা মেটানোকে বোঝায় যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানুষদের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা ব্যাহত না হয়।[১] এই ধারণাটি শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের সাথেও জড়িত। দীর্ঘস্থায়িত্ব ধারণাটিতে কেবল পরিবেশ সংরক্ষণ নয়, বরং সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারগুলিও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে প্রতিভাত হয় যে শিল্পায়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার বহু দশকব্যাপী প্রচেষ্টার পরেও বিশ্বের বহু দেশ চরম দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করছে। মানব ইতিহাসের এই সাম্প্রতিকতম পর্যায়ে পৃথিবীর বুকে মানুষের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু একই সাথে আধুনিক সমাজগুলিতে মানুষের লাগামহীন প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে ছোটা এবং অপচয়প্রবণ ভোগবাদিতাও বাড়তে থাকে, যার কারণে বহু কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে জীবনের ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রাখার যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ও চক্রগুলি আছে, সেগুলির কর্মক্ষমতা কম-বেশি ব্যাহত হয়। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাই দীর্ঘস্থায়িত্বের সমর্থকেরা বলেন যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনা ও সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি করা মানবজাতির দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধির চাবিকাঠি নয়। অর্থনীতি সমাজের বাইরে নয়, আর সমাজ প্রকৃতির বাইরে নয়।
১৯৮৩ সালে জাতিসংঘ নরওয়েজীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রো হার্লেম ব্রুন্টলান্ডকে নব্যপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ব পরিবেশ ও উন্নয়ন সমিতির পরিচালকের পদ দান করে। এর চার বছর পরে সমিতিটি "আমাদের একত্রিত ভবিষ্যৎ" (Our common future) নামক যে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে, তাতে দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই উন্নয়নের উপযুক্ত বিখ্যাত সংজ্ঞাটি প্রথমবারের মত প্রকাশ করা হয়।[১] সমিতিটি সাফল্যের সাথে বিশ্বের উন্নয়ন পরিকল্পনাতে পরিবেশবাদের সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নসংক্রান্ত তত্ত্বগুলির মেলবন্ধন ঘটায়। তাদের মতে দীর্ঘস্থায়ী সমৃদ্ধির জন্য পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতি - এই তিনটি দিককেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন