তিউনিসিয়ার জাতীয় প্রতীক (আরবি: شعار تونس) হল একটি পাল তোলা জাহাজ, তরবারি ধারণকারী সিংহ এবং দাড়িপাল্লা সংবলিত প্রতীক; যার কেন্দ্রে আরবিতে দেশটির রাষ্ট্রীয় নীতিবাক্য লেখা এবং সবচেয়ে উপরে জাতীয় পতাকার কেন্দ্রীয় প্রতীকটি বিদ্যমান। ১৯৫৬ সালের ২১ জুন প্রতীকটি প্রণয়ন করা হয়। এর পর একাধিকবার এর রঙ ও আঙ্গিকগত পরিবর্তন করা হলেও মূল নকশা প্রায় একই থাকে।
নকশা
তিউনিসিয়ার জাতীয় প্রতীকের উপরের অংশে রয়েছে লাল বৃত্তের মাঝে লাল রঙের নতুন চাঁদ ও পাঁচ কোণা তারা। এ অংশের পটভূমি সাদা রঙের। এটি দেশটির জাতীয় পতাকার অনুরূপ।
প্রতীকটির মূল অংশের পটভূমি সোনালি রঙের। এটি ৩টি অংশে বিভক্ত। প্রথমত, এটি একটি অনুভূমিক রেখা দ্বারা দুই অংশে বিভক্ত হয়। নিচের খন্ডটি আবার ডান ও বাম দুই অংশে বিভক্ত।
উপরের খণ্ডে রয়েছে প্রাচীন পুনিক জনগোষ্ঠীর গ্যালি (বিশেষ পাল তোলা জাহাজ)। নিচে বাম খণ্ডে রয়েছে একটি কালো দাড়িপাল্লা। আর ডান খণ্ডে রয়েছে তলোয়ার হাতে একটি কালো রঙের বাম মুখী সিংহ।
প্রতীকটির কেন্দ্রে, জাহাজের ঠিক নিচে আরবিতেরাষ্ট্রীয় নীতিবাক্য: (আরবি: حرية - نظام - عدالة, প্রতিবর্ণীকৃত: হুরিয়াত -নিজাম -আদালাত) লেখা যার অর্থ: স্বাধীনতা-অনুশাসন-ন্যায়বিচার
ব্যাখ্যা
সমুদ্রে চলমান পুনিক 'গ্যালি' জাহাজ স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। এটি দেশটির সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং নিজ সমুদ্রসীমায় সার্বভৌমত্বকেও নির্দেশ করে।
বাঁকা চাঁদ ও পাঁচ কোণা তারা ইসলামের প্রতীক হিসেবে প্রচলিত আছে।
ইতিহাস
বেইলিক জাতীয় প্রতীক
স্বাধীন তিউনিসিয়ার প্রথম জাতীয় প্রতীক হল বেইলিক প্রতীক যা ১৮৬১ সালে মুহাম্মদ সাদিক বে কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। উক্ত প্রতীকটি ১৮৬১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হলেও সেগুলো আসলে বেশ আগে থেকেই প্রচলিত ছিল।[১] ১৮৫৮ সালে প্রকাশিত অঁরি দ্যুনঁ রচিত Notice sur la régence de Tunis বইয়ের প্রচ্ছদে উক্ত প্রতীকটি উপস্থাপিত হওয়াই তার প্রমাণ।[২] ১৯৫৬ সালর ২১ জুনে নতুন প্রতীক প্রচলনের আগ পর্যন্ত এটি ব্যবহৃত হয়।
হুসেইনি জাতীয় প্রতীক (১৮৫৮)
তিউনিসের প্রথম আনুষ্ঠানিক সিল (১৮৮৮)
তিউনিসিয়ার রাজকীয় প্রতীক (১৯০০)
রাজতন্ত্র
১৯৫৬ সালের ২১ জুন একটি ডিক্রি জারির মাধ্যমে বেইলিক জাতীয় প্রতীকের পরিবর্তে তিউনিসিয়া রাজ্যের নতুন জাতীয় প্রতীক প্রবর্তন করা হয়। এতে ছিল[৩]:
প্রতীকের মূল অংশের উপরে নীল পটভূমিতে সাদা পাল সমেত পুনিক গ্যালি জাহাজ।
নিচে বামে সোনালি পটভূমিতে সশস্ত্র ডানমুখী কালো সিংহ। আর ডানে লাল পটভূমিতে কালো দাড়িপাল্লা।
মূল অংশের উপরে তিউনিসিয়ার পতাকার অনুরূপ লাল রঙের চাঁদ ও তারা
পেছনে আড়াআড়িভাবে দুটি করে বর্শা এবং লাল পতাকা
মূল অংশের নিচে একটি ক্রাউন; যার বামে শস্যের ঝাড় এবং ডানে জলপাই পাতার ঝাড়।
সবচেয়ে নিচে জাতীয় নীতিবাক্য
এই জাতীয় প্রতীকটির নকশায় পূর্ববর্তী বেইলিক জাতীয় প্রতীকের প্রভাব লক্ষণীয়।[৪]
প্রজাতন্ত্র
১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটলেও তখনই জাতীয় প্রতীক পরিবর্তন করা হয়নি। কয়েক বছর পর,
১৯৬৩ সালের ৩০ মে পূর্ববর্তী প্রতীকের দাড়িপাল্লা ও সিংহের অবস্থান বিনিময়, বেইলিক প্রতীকের উপাদানগুলো (বর্শা এবং লাল পতাকা) অপসারণ, পটভূমির রঙ পরিবর্তন এবং জাতীয় নীতিবাক্যের অবস্থান পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় প্রতীক চালু করা হয়।[৬] এর পটভূমি ছাড়া বাকি প্রায় সবই বর্তমান প্রতীকের মতো।
বর্তমান প্রতীক
১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রতীকে সামান্য পরিবর্তন আনা হয় যা এখনো চালু আছে। এ ক্ষেত্রে প্রতীকটির মূল অংশের সবগুলো খণ্ডের পটভূমিই সোনালী রঙের করে দেওয়া হয়।[৭]
নতুন প্রতীক
২০১১ সালের বিপ্লবের পরে ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিউনিসিয়ার জন্য একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই সংবিধানের চতুর্থ অনুচ্ছেদে দেশটির পূর্ববর্তী নীতিবাক্য পরিবর্তন করে আরবি: حرية، كرامة، عدالة، نظام অর্থাৎ, স্বাধীনতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং শৃঙ্খলা নির্ধারণ করা হয়।[৮] ফলে জাতীয় প্রতীক পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এজন্য দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১৫,০০০ দিনার পুরস্কারের একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।[৯]
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কায়েস সাইয়েদ সরকার একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য উক্ত প্রতিযোগিতা মুলতুবি করে বর্তমান জাতীয় প্রতীকটি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে[১০][১১]