ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়বাংলাদেশেরঠাকুরগাঁও জেলারঠাকুরগাঁও শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯০৪ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত স্কুলটি সুনামের সাথে তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বহু ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এই সরকারি বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রভাতি ও দিবা দুটি শাখায় ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। এন্ট্রান্স তথা ম্যাট্রিক এবং বর্তমানের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট বা এস.এস.সি. পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যথাক্রমে পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছে।[৪]
ইতিহাস
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। বিদ্যালয়টি ঠাকুরগাঁও শহরের প্রাণকেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।[৫]
ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার উত্তর জনপদের অন্তর্গত ঠাকুরগাঁওয়ে বসবাসকারী শিক্ষায় অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলিত করার জন্য এখানে একটি স্কুল স্থাপন করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারতের (পশ্চিম বাংলার) বর্ধমান জেলার কুসুমগ্রাম জমিদারির (মুন্সী জমিদারির) জমিদার মুন্সী মোহাম্মদ ইব্রাহীম সাহেবের আনুকূল্যে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের উক্ত জমিদারির তৎকালীন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা শহরের উত্তর প্রান্তে সেনুয়া-টাঙ্গন নদীর মিলন স্থলের সন্নিকটে অবস্থিত জমিদার-কাছারি সংলগ্নে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক শুভলগ্নে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি এম.ই. (মিডিল ইংলিশ) স্কুল। ঠাকুরগাঁওয়ে জমিদারদের উক্ত কাছারিটি শহরের বর্তমান রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এবং তৎসংলগ্ন ভূমি অফিসের স্থানে গড়ে উঠেছিল। বিদ্যালয়টি উক্ত স্থানে থাকাকালীন জমিদার-কাছারির একটি বৃহৎ পাকা ঘর ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার হতো।[৬]
প্রায় ৩০ (ত্রিশ) বছর যাবৎ এটি এম.ই. স্কুল রূপে পরিচালিত হয়। সেই সময় এম.ই. স্কুলকে মাইনর স্কুল বলা হতো এবং এসব স্কুলে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করতো। এরপর ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা মার্চ উক্ত স্থানেই শিক্ষালয়টি এইচ.ই. (হায়ার ইংলিশ) স্কুলে পরিণত হয়।[৬] জনাব আলী মোহাম্মদ সরকার উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় রূপে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বহু বৎসর পর্যন্ত এর সহকারী সেক্রেটারি পদে সমাসীন ছিলেন। স্কুলটিকে এইচ.ই. স্কুলে (উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে) রূপান্তরের ক্ষেত্রে রাজশাহী বিভাগের তদানীন্তন ইন্সপেক্টর অব স্কুলস মি. হেল উর্ড বিশেষভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন।[৫][৭]
টাঙ্গন নদীর তীরে প্রথম প্রতিষ্ঠিত মাইনর স্কুলটিতে আটচালা বিশিষ্ট একটি খড়ের ঘর ছিল। উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর স্কুলটিতে ছাত্রসংখ্যা পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পায়। সে সময় উক্ত খড়ের ঘরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় স্কুল সংলগ্ন জমিদার-কাছারির একটি বড় পাকা ঘর স্কুলের কাজে ব্যবহার হতো। উক্ত স্থানে বৃহদাকার ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ও আনুষঙ্গিক সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় স্কুলটি এইচ.ই. স্কুলে রূপান্তরের কিছুকাল পরেই স্থানান্তর করার প্রয়োজন দেখা দেয়। স্কুল স্থানান্তরের নিমিত্তে বর্ধমানের কুসুমগ্রাম জমিদারির তৎকালীন জমিদার বিবি তৈয়বা খাতুন দশবিঘা সাড়ে পনের কাঠা জমি দান করেন। উক্ত জমির উপর ১৯০৬ সাল থেকে ১৯০৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলের সুদৃশ্য অলিন্দযুক্ত দৃষ্টিনন্দন বিশাল অট্টালিকা নির্মিত হয় যা বিদ্যালয়ের প্রধান ভবন এবং বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন নামে পরিচিত। ১৯০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবনটি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে উক্ত সালের ডিসেম্বর মাসেই স্কুলটি টাঙ্গন নদীর পাড় থেকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।[৬]
বিদ্যালয়টির জন্য পরবর্তীতে ঐ জমিদারীর সুযোগ্য উত্তরাধিকারী সৈয়দ বদরুদ্দোজা আরও পঁচিশ বিঘা জমি দান করেন। এরপর স্কুলের নতুন হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য আরও এক একর জমি ১৯৬০-১৯৬৩ সালের মধ্যে হুকুম-দখল সূত্রে আয়ত্ত করা হয়।[৫][৮]
বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদ
১৯০৪ সালের ১ মার্চ স্কুলটি এইচ.ই. স্কুল (উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়) রূপে প্রতিষ্ঠিত হলে এর পরিচালনা পরিষদের প্রথম প্রেসিডেন্ট (সভাপতি) হয়েছিলেন দিনাজপুর জেলার তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. এফজে জেফরিস তিনি স্কুলটি উচ্চ বিদ্যালয় রূপে প্রতিষ্ঠার পূর্বে এম.ই. স্কুলেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন।[৬] ১৯১৮ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দিনাজপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণই পদাধিকার বলে এই স্কুলের প্রেসিডেন্ট এবং ১৯০৪ সাল থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের এস. ডি. ও গণ পদাধিকার বলে সেক্রেটারি ছিলেন।[৬] ১৯১০ সাল থেকে ১৯১৮ সালের ৩১আগস্ট পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের এস.ডি.ও গণ পদাধিকার বলে এই স্কুলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত হতেন। এরপর ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের এস. ডি. ও গণ পদাধিকার বলে এ স্কুলের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হতেন। মাঝে ১৯৫৪ সালে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে জনৈক মহকুমা ইন্সপেক্টর অব স্কুলস জনাব আব্দুল জব্বার এই স্কুলের সভাপতি হয়েছিলেন। তাঁর পরবর্তীকালে ঠাকুরগাঁওয়ের এস.ডি.ও গণ পুনরায় এর সভাপতি মনোনীত হতেন।[৯][৮]
স্কুলটির মঞ্জুরীর জন্য ১৯০৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হলেও ১৯১০ সালের শেষ দিকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী লাভ করে। তখন থেকে ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের মুন্সেফগণ পদাধিকার বলে এ স্কুলের সেক্রেটারি মনোনীত হতেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিলের পর থেকে ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে জুলাই পর্যন্ত (প্রাদেশিকীকরণের পূর্ব পর্যন্ত) স্থানীয় চারজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি এ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা আগস্ট প্রাদেশিকীকরণের (জাতীয়করণের) সময় থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ পদাধিকার বলে সেক্রেটারি মনোনীত হয়ে আসছেন।[৯]
১৯৮৪ সালের ১ ফ্রেব্রুয়ারী ঠাকুরগাঁও মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হলে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসকগণ সভাপতি এবং বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকগণ সেক্রেটারি মনোনীত হয়ে আসছেন।।[৫][৭]
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগমন
১৯২৯ সালের ১০ই মার্চ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এসেছিলেন ঠাকুরগাঁও এ। উপলক্ষ্য,তিনি ঠাকুরগাঁও হাইস্কুলের বার্ষিক মিলাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন। এ উপলক্ষ্যে বিদ্যালয়ের ছাত্র,অভিভাবক,শিক্ষক,স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ীসহ মহকুমার বিভিন্ন জায়গা হতে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সর্বমোট উত্তোলন করা চাঁদার পরিমাণ ছিলো প্রায় ২০০০ টাকা। এসময় স্কুলের তৎকালীন ছাত্ররা একটি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে।কবিকে অনুরোধা জানানো হলে কবি 'জাগরণ' নামে একটি কবিতা রচনা করেন। কবিতাটির প্রথম লাইন ছিলো
জাগরণ
ওরে ও শীর্ণা নদী
দু'তীরে নিরাশা বালুচর লয়ে
জাগিবিকি নিরবধি
বিদ্যালয়ের নামকরণ
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ৩০ (ত্রিশ) বৎসর যাবৎ এটি ‘ঠাকুরগাঁও এম.ই. স্কুল’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯০৪ সালের পহেলা মার্চ স্কুলটি এইচ. ই. স্কুলে উন্নীত হলে স্কুলটির নাম হয় ‘ঠাকুরগাঁও এইচ.ই. স্কুল’। এরপর ১৯০৬ সালে রাজশাহী বিভাগের তদানীন্তন কমিশনার মারিনডাইনের নামানুসারে স্কুলটির নামকরণ হয় ‘মারিনডাইন এইচ.ই. স্কুল’ কিন্তু পরবর্তীকালে এই নাম পরিত্যক্ত হয় এবং বিদ্যালয়টি পুনরায় ‘ঠাকুরগাঁও এইচ.ই. স্কুল’ নামে পরিচালিত হতে থাকে। এরপর ১৯৫৭ সাল থেকে এটি ‘ঠাকুরগাঁও এইচ.ই. স্কুল’ নামের পরিবর্তে ‘ঠাকুরগাঁও হাই স্কুল’ নামে লেখা শুরু হয়। ১৯৬৭ সালের ১ আগস্ট বিদ্যালয়টি প্রাদেশিকীকৃত বা জাতীয়করণ (সরকারি) হলে এটি ‘ঠাকুরগাঁও গভমেন্ট হাই স্কুল’ নামে অভিহিত হয়। সম্ভবত একে শুধু বালকদের স্কুল রূপে বুঝানোর জন্য উক্ত সময় থেকে একে ‘গভমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, ঠাকুরগাঁও’ নামে স্কুল নথিপত্রে লেখা হয় এবং এ নামের সীল ব্যবহার করা হয়।
১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের নথিপত্রে দেখা যায় বিদ্যালয়টির যাবতীয় বিষয়াদি ইংরেজি ভাষায় লেখা হতো। এরপর থেকে বাংলা ভাষায় লেখা শুরু হয়। ঐ সময় বাংলায় বিদ্যালয়টির নাম কখনো ‘ঠাকুরগাঁও সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়’ আবার কখনো ‘ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়’ লেখা হতো। বর্তমানে এটি শেষোক্ত নামে অভিহিত।[৯]
১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও মহকুমা জেলায় রূপান্তরিত হলে বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে ‘ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুল’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। তবে এই নাম সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।[৮]
অবকাঠামো
বাংলাদেশেরউত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যবিন্যাস হিসেবে পরিচিত ঠাকুরগাঁও শহরের প্রাণকেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে সাড়ে তের একর উন্মুক্ত জমির উপর স্থাপিত এই বিদ্যালয়টি শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এবং এ অঞ্চলের একটি আদর্শ ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্কুলে একটি বিশাল দ্বিতল বিজ্ঞান ভবন, একটি মিলনায়তন ভবন, দ্বিতল পূরবী ভবন, সুবিশাল প্রশাসনিক ভবন, গ্রন্থাগার ভবন, একটি সংস্কার উপযোগী জিমনেশিয়াম, বিরাট দ্বিতল উত্তরা ভবন, দ্বিতল বিশিষ্ট বিশাল মাল্টিপারপাজ হল, সুদৃশ্য বিরাট মসজিদ, ছয়টি ভবনের সমন্বয়ে বিরাট মুসলিম হোস্টেল, প্রধান শিক্ষক ও হোস্টেল সুপারের বাস ভবন, বিশালায়তনের দুটি মাঠ, একটি বিশাল সাইকেল স্ট্যান্ড, পশ্চাৎ অংশে ১টি পুকুর, গাছে ঘেরা প্রাঙ্গণ রয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের উত্তরা ভবন ও পূরবী ভবনের মোট ১৬ টি কক্ষে মূল পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিজ্ঞান ভবনে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব, রসায়নবিজ্ঞান ল্যাব এবং জীববিজ্ঞান ল্যাবসহ অন্যান্য পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা উপযোগী আরো ৫ টি কক্ষ।
ফলাফল
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বরাবরই বিভিন্ন পরীক্ষায় সফলতার সাথে ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে। পি.ই.সি., জে.এস.সি. এবং এস.এস.সি. পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির সফলতা বহু বছর ধরেই সেরাদের কাতারে। প্রায় প্রতিবছরই ৯৯–১০০% পাশের হার অর্জিত হয় ও ছাত্রদের একটি বিশাল অংশ জিপিএ–৫ পেয়ে থাকে।[১০][১১] বিদ্যালয়টি জেলায় তো বটেই দেশের শিক্ষা বোর্ডেও প্রথম সারির বিদ্যালয় হিসেবে চমৎকার ফলাফল করে আসছে। শতবর্ষী এই বিদ্যালয়টি সবসময়ই লেখাপড়াসহ সকল বিষয়েই অঞ্চলের সেরা বিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত।
উল্লেখযোগ্য অর্জনসমূহ
১৯৯২ সালে এ বিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং তৎকালীন সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব মুহম্মদ জালাল উদ-দীন রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০১৬ সালের ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০১৬’- তে বিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে এ বিদ্যালয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে নির্বাচিত হয়।[১২][১৩] জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পূর্বে উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে এ বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সেই সঙ্গে এ বিদ্যালয়ের তৎকালীন সুযোগ্য প্রধান শিক্ষক জনাব মো. আখতারুজ্জামান রংপুর বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন।[১৪] এছাড়া ২০১৭ সালে বিদ্যালয়টি বিভাগীয় পর্যায়ে (রংপুর বিভাগে) শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় নির্বাচিত হয়।
প্রথম প্রবেশিকা পাস ছাত্র
১৯০৯ সালে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয় হতে প্রথম যে ছাত্রটি প্রবেশিকা (এন্ট্র্যান্স) পাস করার গৌরব অর্জন করেন, তিনি হলেন পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর গ্রামের করিম উদ্দীন আহমদ। তিনি দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছিলেন।
শিক্ষার্থীদের পোশাক
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরা আবশ্যক। তবে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টির এম.ই. স্কুল রূপে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষ সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত কোনো পোশাক ছিল না। ১৯৬৩ সালের দিকে বিদ্যালয়ের সুযোগ্য ও চৌকস প্রধান শিক্ষক জনাব রুস্তম আলী খান এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য একই রকম পোশাকের প্রবর্তন করেন। সেই সময় সাদা কাপড়ের পাজামা এবং সাদা কাপড়ের চাইনিজ ফুলহাতা শার্ট ছাত্রদের নির্ধারিত পোশাক ছিল।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ইউনিফর্ম ড্রেস নিম্নরূপ:
হাফ হাতা সাদা শার্ট
নেভি ব্লু রঙের ফুল প্যান্ট
নকশাবিহীন সাদা জুতা (কেডস) ও সাদা মোজা
নেভী ব্লু সোয়েটার (শীতকালের জন্য)
কাঁধে বিদ্যালয়ের নামের প্রতি শব্দের আদ্যাক্ষর সংবলিত প্রভাতী শাখার ছাত্রদের জন্য নেভী ব্লু রঙের কাঁধ-ব্যাজ ও দিবা শাখার ছাত্রদের জন্য লাল রঙের কাঁধ-ব্যাজ
কালো বেল্ট
আইডেন্টিটি কার্ড
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহ
বিএনসিসি: বাংলাদেশ টেরিটোরিয়াল ফোর্স (BFT) অ্যাক্ট দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উইং এর অধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর জুনিয়র ডিভিশনের ৩১ সদস্যের একটি প্লাটুন এ বিদ্যালয়ে রয়েছে। আর্মি উইং এর অধীন বিদ্যালয়ের এ প্লাটুন ‘জ্ঞান, শৃঙ্খলা, একতা’ এই মোটো নিয়ে বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।[১১]
স্কাউটিং: শিশুদেরকে সার্বিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শতবর্ষ পূর্বে স্যার ব্যাডেন পাওয়েল যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সেই আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে এ বিদ্যালয়ে গঠিত হয়েছে ‘ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় স্কাউট দল’।[১৫]
কাব স্কাউট: স্কাউট কার্যক্রমে ৬ থেকে ১০+ বয়সী শিশুদের জন্য নির্ধারিত কাব স্কাউট শাখায় এ বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয়েছে কাব স্কাউট দল।[১১]