জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯বাংলাদেশের একটি বিশেষ আইন এবং বাংলাদেশে সমালোচিত আইনগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইনটি ১৩ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়।[১] ২৯ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে এই আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।[২][৩] অতঃপর ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে এই আইনটি বাতিল করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।[৪][৫]
ইতিহাস
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই আইনটি 'জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিল-২০০১' নামে সংসদে উপস্থাপিত হয় এবং ২০ জুন ২০০১ খ্রীস্টাব্দের ২৯ নম্বর আইন[৬] হিসাবে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নেতৃত্বাধীন সরকার অষ্টম সংসদে ২ রা ডিসেম্বর, ২০০১ খ্রীস্টব্দের ৬০ নম্বর আইনের[৬] মাধমে তা রহিত করে।[৭][৮][৯] ৫ অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে উপর্যুক্ত রহিত আইনটি নতুনভাবে প্রণয়নের জন্য সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়।[১০] ২০০৯-এ আ্ইনটি সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হলেও এ সময় সংসদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কোনো শরিক দল সংসদে উপস্থিত ছিলো না।[৭] পরবর্তী সময়ে ১৫ মে, ২০১৫ তারিখে উক্ত আইন অনুসারে বিশেষ নিরাপত্তা এবং সুবিধাদি প্রদানের গেজেট জারী করা হয়। ২০২১ সালে সংসদে আইন পাস করা হয়।[১১][১২] সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর এই আইনটি বাতিলের দাবি উঠে, এরপর সরকার এই আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় যা ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়।[১৩]
আইনের উদ্দেশ্য
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ খ্রীস্টাব্দের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। তবে, বিদেশে অবস্থানরত তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে জাতির পিতার পরিবারের জীবিত সদস্যদের একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ জন্য ওই সদস্যদের নিরাপত্তা রক্ষায় রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করার লক্ষ্যে এ আইনটি করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিলের সঙ্গে উপস্থাপিত সরকারি বক্তব্যেও এই উদ্দেশ্য বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[১০]
শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। আইনের ২ ধারায় বলা হয়েছে, "জাতির পিতা" অর্থ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার রূপকার, বাংলাদেশের স্খপতি এবং সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন, ১৯৭৫-এর ধারা ৩৪-এর দফা(খ) দ্বারা সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত। "পরিবারের সদস্য" অর্থ জাতির পিতার জীবিত দুই কন্যা এবং তাদের সন্তানাদি। ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি কার্যকর হবে।
এই আইনে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তদীয় বংশধর ভিআইপি নিরাপত্তা ও সরকারিভাবে নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসন এবং প্রয়োজনীয় অন্য সুবিধাদি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস অর্ডিন্যান্স-১৯৮৬ এর আওতায় জাতীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের (ভিআইপি) জন্য যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। আইনের ৪ নম্বর ধারায় সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের আজীবন যেকোন স্থানে সেরকম নিরাপত্তা প্রদান করার কথা বলা হয়েছে। এ নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার পরিবার-সদস্যদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়ার কথাও উল্লেখি হয়েছে। একই ধারার উপধারা ৩-এ, সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সেই বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্য সুবিধাদি প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে।