চাঁদপাড়া হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বনগাঁ মহকুমার অন্তর্গত একটি শহর। এটি গাইঘাটা থানার অন্তর্গত। এই শহরটি প্রধানত গড়ে উঠেছে চাঁদপাড়া বাজারকে কেন্দ্র করে। বর্তমানে শহরটি পার্শবর্তী চেকাটি, ঢাকুরিয়া, সোনারটিকারি, শিমুলিয়াপাড়া ও দেবীপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। এই শহর ও সোনারটিকারি ২০১১ সালের জনগননায় সেন্সার টাউনে পরিনত হয়েছে। ২০১১ সালের হিসাবে এই বৃহত্তর চাঁদপাড়ার মোট জনসংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে ডাকুরিয়ার জনসংখ্যা ১০ হাজার। বনগাঁ মহকুমার মধ্যে বনগাঁ শহর এর পর চাঁদপাড়াই সবচেয়ে বড় শহরাঞ্চল। বর্তমানে এই শহরাঞ্চলের জন্য একটি পৌরসভা গঠনের দাবি উঠেছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে।
ভৌগোলিক উপাত্ত
শহরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১১ মিটার উচু। এটি গঙ্গা-বহ্মপুত্র ব-দ্বীপ এর অংশ। এটি আর্সেনিক-কবলিত অঞ্চল।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের জনগণনায় চাঁদপাড়ার জনসংখ্যা প্রায় ৭,১১৩ জন। এই শহরের মোট জনসংখার ৫১% পুরুষ ও ৪৯% নারী। এখানে মোট জনসংখার ১৩% শিশু। শিক্ষার হার ৮১% যা জাতীয় হার ৭৪% এর থেকে বেশি।[১]
পরিবহন
চাঁদপাড়া দিয়ে চলে গেছে ৩৫ নং জাতীয় সড়ক (ভারত)।[২][৩]চাঁদপাড়া রেলওয়ে স্টেশন চাঁদপাড়ার সঙ্গে বনগাঁ, হাবরা, বারাসত ও কলকাতা শহরের যোগাযোগ রক্ষা করে।শহরটির বেশির ভাগ পাকা রাস্তা।চাঁদপাড়া-ঠাকুরনগর রোড, চাঁদপাড়া-ঝাউডাঙ্গা রোড,চাঁদপাড়া-পাল্লা রোড যথাক্রমে ঠাকুরনগর, ঝাউডাঙ্গা ও পাল্লার সঙ্গে চাঁদপাড়ার যোগাযোগ রক্ষা করে।চাঁদপাড়া-ঝাউডাঙা রোড এর দ্বারা চাঁদপাড়া যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে। এই সীমান্ত দ্বারা বিভিন্ন পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। ৩৫ নং জাতীয় সড়ক বাংলাদেশ এর সঙ্গে যুক্ত করেছে চাঁদপাড়াকে পেট্রাপোল সীমান্তে। বর্তমানে জাতীয় সড়ক ৩৫ কে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা
চাঁদপাড়ার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সরকারিভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করে। সরকারি বিদ্যালয়গুলি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ ও পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং একটি "১০+২+৩" পরিকল্পনা অনুসরণ করে। শিক্ষার মূল ভাষা হল বাংলা, তবে বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক সুবিধাযুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। শিক্ষার্থীদের দশম শ্রেণিতে কৃতকার্য পরে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট এবং বা দ্বাদশ শ্রেণিতে কৃতকার্য পরে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
চাঁদপাড়ায় ১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে; পাশাপাশি ২ টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে একটি বালিকা বিদ্যালয়। এই শহরের উল্লেখ যোগ্য ও সবচেয়ে প্রাচীন উচ্চবিদ্যালয় হল চাঁদপাড়া বানী বিদ্যা বিথী, বালিকা বিদ্যালয় হল চাঁদপাড়া বালিকা বিদ্যালয়।
চাঁদপাড়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য একটিমাত্র মহাবিদ্যালয় রয়েছে – বেঙ্গল আর্ট কলেজ, এটি শহরের একমাত্র কলেজ।
অর্থনীতি
এখানে বড় বাজার রয়েছে। এখানকার বেশির ভাগ ব্যক্তি ব্যবসা বা চাকরিজীবী। চাঁদপাড়া বাজার এলাকার সবচেয়ে বড় কাঁচা সবজীর বাজার। এখান থেকে সবজী কলকাতা পাঠানো হয়।ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এই সবজী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এখানে একটি আইসক্রিম কারখানা আছে।চাঁদপাড়ায় বহু কাঠকল বা কাঠ মিল, দুটি তেল মিল রয়েছে। তাছাড়া কৃষিকাজ এই এলাকার মানুষের অন্যতম জীবিকা।