গুরুসদয় দত্ত[১](১০ মে ১৮৮২ - ২৫ জুন ১৯৪১) [২][৩][৪] ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী, লোক সাহিত্য গবেষক এবং লেখক। তিনি ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বহুল পরিচিত।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
গুরুসদয় দত্ত ১৮৮২ সালের ১০ মে সিলেট জেলারজকিগঞ্জ উপজেলার (তৎকালীন করিমগঞ্জ মহকুমা) বিরশ্রী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৫][৬] তার পিতা রামকৃষ্ণ দত্ত চৌধুরী ছিলেন সম্ভ্রান্ত জমিদার। গুরুসদয় দত্ত নিজে পারিবারিক উপাধি "চৌধুরী" ব্যবহার করতেন না। তার মাতার নাম আনন্দময়ী দেবী।
শিক্ষাজীবন
গুরুসদয় দত্তের শিক্ষাজীবন শুরু হয় সিলেট জেলারজকিগঞ্জ উপজেলার বিরশ্রী গ্রামের মাইনর স্কুলে। তারপর তিনি সিলেট শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুল থেকে ১৮৯৯ সালে তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেন। মেধানুসারে তিনি আসাম প্রদেশে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯০১ সালে তিনি এফ. এ পরীক্ষা দেন এবং মেধানুসারে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর তিনি বিলাত গমন করেন। ১৯০৪ সালে তিনি আই. সি. এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেন। [৭]
কর্মজীবন
মহকুমা শাসকের কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটে। একজন দক্ষ আইসিএস অফিসার হিসেবে তিনি পল্লী উন্নয়নের কাজে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। ১৯২৮ সালে বামনগাছি রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কর্মচারী ও শ্রমিক ও কৃষকদের উপর ব্রিটিশ পুলিশদের নির্বিচারে গুলি চালানোর প্রতিবাদে তিনি সরব হন এবং তাঁর এই প্রতিবাদের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে লণ্ডনের লর্ডস হাউজেও।
ব্রতচারী আন্দোলন
মূল নিবন্ধ: ব্রতচারী আন্দোলন
গুরুসদয় দত্ত মূলত ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। ব্রতচারীদের মধ্যে তিনি প্রবর্তক জী নামে খ্যাত ছিলেন। ব্রতচারীদের অভিবাদন ভঙ্গি, বেশ, মাতৃভাষা প্রীতি, স্বাস্থ্যজ্ঞান, সত্যনিষ্ঠা, সংযম, প্রফুল্লভাব, অধ্যবসায়, আত্মনির্ভরতা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ তৎকালীন সময়ের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ গুরু সদয় দত্ত প্রতিষ্ঠিত ব্রতচারী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন।
রচনা
গুরুসদয় দত্ত বিভিন্ন সময় অসংখ্য গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেছিলেন, যেগুলো বর্তমানে দুর্লভ। তার রচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
Agricultural Organization and Rural Reconstruction in Bengal (1919)
ভজার বাঁশি (১৯২২)
গোড়ায় গলদ (১৯২৬)
গ্রামের কাজের ক খ গ (১৯২৮)
সরোজনলিনী (১৯২৮)
পল্লী সংস্কার ও সংগঠন (১৯২৮)
পাগলামির পুঁথি (১৯২৮)
পুরীর মাহাত্ম্য (১৯২৮)
A Woman of India (Biography of Sarojnalini Dutt) (1928)
গানের সাজি (১৯৩১)
বাংলার সামরিক ক্রীড়া (১৯৩১)
Folk Song and Folk dance in Indian School (1931)
পটুয়া (১৯৩২)
চাঁদের বুড়ি (ছড়া) (১৯৩৩)
ব্রতচারী সখা (গানের বই) (১৯৩৩)
The Indian Folk Dance and Folk Song Movement (1933)
ব্রতচারী মর্মকথা (১৯৩৭)
Bratachari Synthesis (1937)
পটুয়া সঙ্গীত (১৯৩৯)
ব্রতচারী পরিচয় (১৯৪১)
Bratachari its aim and meaning (1942)
The Folk Dances of Bengal (1954)
পল্লী সঙ্গীত
শ্রীহট্টের লোকসঙ্গীত(১৯৬৬)
Folk Art and Crafts of Bengal (1990)
বাংলার বীরযোদ্ধা রায়বেঁশে (১৯৯৪)
Art of Kantha (Album) (1995)
শেষজীবন ও মৃত্যু
১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং দুরারোগ্য কর্কট রোগের কারণে তার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। [৮] ১৯৪১ সালের ২৫ মে তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[২][৯]