খড়্গ প্রসাদ শর্মা ওলী (কে. পি. ওলী, কেপি বা (নেপালি: खड्गप्रसाद शर्मा ओली) নামেও পরিচিত; জন্ম: ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) একজন নেপালি রাজনীতিবিদ ও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি এমালের সভাপতি এবং নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী[৩][৪][৫][৬] তিনি নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি-এর চেয়ারম্যানদ্বয়ের অন্যতম। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি, দুইটি রাজনৈতিক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) ও নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী কেন্দ্র)-এর সমন্বয়ে গঠিত। ওলী প্রথম দফায় ১১ অক্টোবর ২০১৫ থেকে ৩ আগস্ট ২০১৬ পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে নেপালের নতুন প্রণীত সংবিধানের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৭]
ব্যক্তিগত জীবন
ওলী ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তেহ্রথুম জেলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৮][৯] তিনি পিতা মোহন প্রসাদ ও মা মধুমায়া ওলীর জ্যেষ্ঠ সন্তান। ওলীর চার বছর বয়সে মা মধুমায়া গুটিবসন্তে মারা যান। এরপর তিনি নানি রামমায়ার নিকট প্রতিপালিত হন।[১০] তিনি তেরথুমেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে পরিবারের সাথে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ঝাপা জেলায় স্থানান্তরিত হন। ওলী রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে অধিকাংশ সময় এই ঝাপাতেই অতিবাহিত করেছেন। ওলী ১২ বছর বয়সে দমক শহরের হিমালয়া হাইয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন পড়াশোনা ছেড়ে দেন।[১১]
ওলীর স্ত্রী রাধিকা শাক্যও একজন কমিউনিস্ট নেত্রী। পার্টির মধ্যেই তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন।[১২]
রাজনৈতিক জীবন
মার্ক্সবাদী বিদ্রোহ (১৯৬৬-১৯৯১)
১৯৬৬ সালে, রাজনৈতিক দলবিহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সময়ে ওলীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এর মধ্যেই তিনি বিধ্বংসী রাজনীতিতে জড়িয়ে যান এবং ১৯৭০ সালেই প্রথম কারাবরণ করেন। এক বছর পর তিনি পার্টির জেলা সমিতির সদস্য হন এবং ১৯৭২ সালের মধ্যেই ঝাপা আন্দোলনের ব্যবস্থাপক সমিতির প্রধান নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ১৪ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি (একীকৃত মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)-র লুম্বিনী অঞ্চলের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় সমিতির সদস্য হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বহু-দলীয় গণতন্ত্র (১৯৯১-২০০৬)
১৯৯০ সালের গণ আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে ওলী ঝাপা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে তিনি দলের পররাষ্ট্র বিভাগের প্রধান হন।
১৯৯৪ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মনমোহন অধিকারীর সংখ্যালঘু সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৯ সালের নির্বাচনে ওলী ঝাপা-২ ও ঝাপা-৬ আসন থেকে প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচিত হন, কিন্তু তিনি ঝাপা-৬ আসনটি ছেড়ে দেন।
ক্রান্তিকাল
২০০৬ সালে ওলী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হন।[১৩][১৪] সহকর্মী মদন ভাণ্ডারীর মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্বও তাকে দেওয়া হয়।
ওলী ২০০৮ সালে সংবিধান সভা নির্বাচনে ঝাপা-৭ আসন থেকে হেরে যান। এরপর ২০০৯ সালে সিপিএন-ইউএমএলের সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে ঝলনাথ খানালের কাছে হেরে যান।
২০১৩ সালের সংবিধান সভা নির্বাচনে ঝাপা-৭ আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং পার্টি চেয়ারম্যান ঝলনাথ খানালকে হারিয়ে দলের সংসদীয় পার্টির নেতা নির্বাচিত হন।[১৫] পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দলের নবম সাধারণ সভায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন।[১৬][১৭]
প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর ওলী সংবিধান সভায় ৫৯৭ ভোটের মধ্যে ৩৩৮টি ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। নেপালের একীভূত কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী), রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি, মধেশী অধিকার ফোরাম এবং অন্যান্য ১৩টি ছোট দল ওলীকে সমর্থন দেয়। ১২ অক্টোবর তাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।[১৮]
প্রথম দফাতেই নেপালের নতুন সংবিধান ঘোষণার পর ভারত নেপালে অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করে।[১৯] তিনি সংবিধান পুনঃসংশোধনে ভারতের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দাঁড়ান এবং ভারত-নির্ভরতা কমানোর জন্য চীনের সাথে বাণিজ্য ও পরিবহন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।[২০]
২০১৬ সালের ১৩ জুলাই নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী-কেন্দ্র) জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে দেয় এবং ১৪ জুলাই অনাস্থা প্রস্তাব আনে। এতে সিপিএন-ইউএমএল ও ওলী সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারান। কিন্তু সিপিএন-ইউএমএল সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনায় বসে। এর মধ্যে অন্য দুই বৃহৎ দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি ও মধেশী অধিকার ফোরাম-গণতান্ত্রিক জোট সরকারের উপর তাদের সমর্থন তুলে দেয়। আলোচনার তৃতীয় দিন, ২৪ জুলাই বিরোধী দলগুলোর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে ওলী পদত্যাগ করেন।
দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব
২০১৭ সালের নির্বাচনে ইউসিপিএন (মাওবাদী)-এর সমর্থন নিয়ে সিপিএন-ইউএমএল প্রতিনিধি সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ওলী ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।[২১][২২] পরবর্তীতে ১১ মার্চ ২৭৫ সদস্যের প্রতিনিধি সভায় আনা একটি আস্থা ভোটে ওলী ২৬৮-এর মধ্যে ২০৮টি ভোট লাভ করেন।[২৩]
নির্বাচনের ফলাফল
ওলী সিপিএন-ইউএমএল এর হয়ে ঝাপা জেলা থেকে ১৯৯১, ১৯৯৪, ১৯৯৯, ২০০৮, ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন।[২৪] তিনি ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে দুইটি আসন থেকে জয়ী হন এবং ঝাপা-৬ আসনটি ছেড়ে দেন। ২০০৮ সালে সংবিধান সভা নির্বাচনে তিনি হেরে যান।
এখানে শুধুমাত্র বিজয়ী ও নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোট দেখানো হয়েছে।