পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের সাথে কালীচরণ (১৯৭৬)-এ মূল ভূমিকায় শত্রুঘ্ন সিনহার সফল অভিষেক চলচ্চিত্রে তাকে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। কোতোয়ালে সাব-এ সিনহা এক ন্যায়পরায়ণ কঠোর পুলিশ-অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন যিনি দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ধরে বেরিয়েছেন যিনি একজন চোরাচালানকারী এবং ডনও।[৫]
পটভূমি
ভারত প্রসাদ সিনহা (শত্রুঘ্ন সিনহা) শহরের নতুন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি)। পুলিশ কমিশনার রমেশ কুলকার্নি (ওম শিবপুরী) তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কমিশনার তাকে জানান যে ধরম কোহলি (উৎপল দত্ত), যিনি আসন্ন নির্বাচনে বিধায়ক হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন, তিনি চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত। দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভারতকে দুর্নীতির অভিযোগে এবং কোহলির সাথে যোগসাজসে থাকার জন্য ইন্সপেক্টর ঠাকুরকে (মনমোহন) বরখাস্ত করতে হয়। ভারত এখন ইন্সপেক্টর হিসাবে দায়িত্ব নেয়, তার আসল পরিচয় গোপন রেখে, তারপর সে মহেশ (সুধীর) সম্পর্কে সোর্স থেকে জানতে পারে, যে সে কোহলির একজন (ডন নামেও পরিচিত) ডানহাত। সে মহেশকে তার বাড়িতে গ্রেপ্তার করতে যায় যেখানে মহেশ তার মা এবং বোনের সাথে থাকে। সেখানে প্রভা (অপর্ণা সেন) এর সাথে ভারতের দ্বন্দ্ব হয়, যিনি একজন পারিবারিক বন্ধু। প্রভা এক সহৃদয় বৃদ্ধ ভদ্রলোক, জন ফার্নান্দেস (ডেভিড) এর সাথে থাকে। মহেশ রাতে প্রভার ঘরে যায় এবং তাকে তার মায়ের কাছে একটি চিঠি পৌঁছে দেবার প্রস্তাব করে যা কোহলির লোকেরা সংগ্রহ করবে। প্রভা এই বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে তিনি মহেশের কোনও অন্যায়ের পক্ষ নেবেন না। কথোপকথনটি ভারত এবং তার দল শুনেছে, যারা মহেশকে বাসাটি ছেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে গ্রেপ্তার করে।
ভারত কোহলিকে গ্রেপ্তার করে কিন্তু কোহলির ছোটখাটো হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাকে ছেড়ে দিতে হয়। ভারত গোপনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, এবং পুলিশ কমিশনারের সাথে গোপনে কাজ করেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। শহরের মানুষ ডন-রাজনীতিবিদটির পাশে থাকে এবং ভারতকে সাহায্য করতে অস্বীকার করে কারণ তিনি এখন আর পুলিশ অফিসার নন। বাসস্থান খুঁজতে খুঁজতে তিনি ফার্নান্দেজের বাড়িতে পৌঁছান যেখানে প্রভা ভাড়াটে হিসেবে থাকে। সৎ ফার্নান্দেস এবং প্রভাকে শীঘ্রই ভারতের পক্ষে আনতে সক্ষম হন এবং তিনিও সেখানে ভাড়াটে হিসাবে থাকতে শুরু করেন।
কোহলির লোকেরা প্রভাকে তার মা অসুস্থ বলে একটি মিথ্যা টেলিগ্রাম পাঠায়; তারা সেসময় ভারতকে জানায় যে প্রভা বিপদে পড়েছে। ভারত তার পিছু নেন এবং তারা প্রভার মায়ের বাড়িতে পৌঁছান। সেখানে ভারত তার অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং প্রভাকে তাকে বিয়ে করতে বলেন। বিয়ের পর, ভারত তাকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যান যেখানে প্রভা ভারতের বোন সরস্বতীর (ঋতু কানওয়াল) সাথে দেখা করে, যার সাথে ভারত আর সম্পর্ক রাখতে চান না। প্রশ্ন করলে, ভারত প্রভাকে জানান যে তার বোনের এক পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল এবং সে বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়েছিলেন। অপর্ণা অনুরোধ করেন যে তিনি এখন একই ব্যক্তির সাথে বিবাহিত এবং ভারত যেন তাকে ক্ষমা করেন। তিনি তার বোনের সাথে মিটমাট করতে অস্বীকার করেন, তাকে চরিত্রহীন বলেন।
শহরে ফিরে, ভারত জানতে পারেন যে মহেশ পালিয়ে গেছে। ভারত তার সহ-অফিসার, ইন্সপেক্টর বেদ (রাজা মুরাদ) কে জানায় দেয় যে সে এখনও বাহিনীতে আছে। মহেশের সাহায্যে অবস্থি (আসরানী), কোহলির জন্য কাজ করে, প্রভা এবং মহেশের অতীত সম্পর্ক থেকে তাদের অন্তরঙ্গ ছবিগুলো হস্তগত করে। সে প্রভাকে ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছে একটি ফাইল পাওয়ার জন্য যেটি নিয়ে ভারত কাজ করছে যা কোহলিকে গ্রেফতার করতে সাহায্য করবে। প্রভা প্রত্যাখ্যান করলে, মহেশ থানায় প্রবেশ করে এবং প্রভা ও তার আগের সম্পর্কের কথা ভারতকে জানায়। ভারত তার স্ত্রীর সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আতঙ্কিত হয় এবং যখন প্রভা তার প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করে, তখন সে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ইতোমধ্যে কোহলি এবং অবস্থিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। কোহলি ইন্সপেক্টর জাইদির বন্দুক কব্জা করতে সক্ষম হয এবং ধস্তাধস্তির মধ্যে ভারতকে গুলি করে। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করার সময় তিনি তার স্ত্রীকে দেখতে চান। যখন প্রভা আসে তখন তিনি তার কাছে ক্ষমা চান এবং তাকে সরস্বতীকে ক্ষমা করে দিতে বলেন। ভারত অপারেশন থেকে বেঁচে যান এবং প্রভার সাথে একত্রিত হন।
কুশীলব
ইন্সপেক্টর/ডিএসপি ভারত প্রতাপ সিনহা হিসেবে শত্রুঘ্ন সিনহা
কোতয়াল সাব পরিচালনা করা কালীনঅমিতাভ বচ্চন এবং রেখা অভিনীত আলাপ (১৯৭৭) নিয়ে মুখার্জী ইতোমধ্যেই বক্স-অফিসে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। মুখার্জির স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে এবং তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তার সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে অক্ষম হন। ফিল্ম ওয়ার্ল্ড খণ্ড ১৪-এ, টিএম রামচন্দ্রন বলেছেন যে আলাপ (মিউজিক্যাল অ্যাসেন্ট) এবং কোতোয়াল সাব উভয়ই "সত্য হওয়ার পক্ষে খুব দুর্বল" ছিল, এর সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে আরও বলে যে "যে বিভ্রান্তি 'আলাপ' এবং 'কোতওয়াল সাব'-এর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি চিহ্নিত করে তা কেবল তার অনিশ্চিত স্বাস্থ্যের জন্যই দায়ী করা যেতে পারে।" [৬]
হৃষিকেশ মুখার্জি শত্রুঘ্ন সিনহাকে এক পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করিয়েছিলেন। সিনহা ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার ট্রেড-মার্ক "কেতাদুরস্ত" নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করা থেকে সরে আসেন, মূল নায়কের ভূমিকায়।[৫] তার "আড়ম্বরপূর্ণ খলনায়ক" ভূমিকা দর্শকদের কাছে তার জনপ্রিয়তাকে "উচ্চতর" করেছিল। সুভাষ ঘাই-এর কালীচরণ (১৯৭৬)-এ একটি প্রধান ভূমিকায় তার সফল অভিষেক চলচ্চিত্রটির একটি "প্রধান সাফল্য" হিসাবে পরিণত হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে সেই সময়ের সেরা পরিচালকদের সাথে কাজ করার পথকে প্রশস্ত করেছিল।[৭]কোতোয়াল সাব-এ মুখার্জির জন্য সিনহার ইমেজ “ব্যক্তিত্ব” এর দিকে নজর দিতে হয়েছিল। তাকে তাকে “ডি-ইমেজ” করতে হয়েছিল এবং মুখার্জির মতে, রিহার্সালের সময় সবকিছু মসৃণভাবে কাজ করে, রিহার্সাল করার সময় অভিনয়কে "চমৎকার" বলে। তবে, ক্যামেরার সামনে সিনহা আবার "শত্রুঘ্ন সিনহা রূপে" ফিরে আসেন।[৮]
অপর্ণা সেন, একজন বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, এর আগে দুটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, কেওয়াল পি. কাশ্যপ পরিচালিত বিশ্বাস (১৯৬৯)-এ সহ-অভিনেতা ছিলেন জিতেন্দ্র, এবং দেশ মুখার্জি পরিচালিত শশী কাপুর এবং অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ইমান ধরম (১৯৭৭)। তিনি চরিত্রগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি এবং চলচ্চিত্রগুলো বক্স-অফিসে খারাপ পারফরম্যান্স করেছিল। এনডিআর চন্দ্রের বই মাল্টিকালচারাল লিটারেচার ইন ইন্ডিয়া: ক্রিটিক্যাল পারসেপশনস-এ “অপর্ণা সেনের চলচ্চিত্রে নারীবাদী চেতনা” শিরোনামে সেনের অধ্যায়ে এসকে পালের মতে, সেন দেখতে পেয়েছেন যে বোম্বাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের চেয়ে গ্ল্যামারের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে, কোতোয়াল সাব করার সময় তিনি পুরো ব্যাপারের সাথে “অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য” এবং তার অভিনয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন।[৯]
গ্রহণ
কোতয়াল সাবকে ফিল্ম ওয়ার্ল্ড কর্তৃক একটি গড় চলচ্চিত্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল এবং বক্স অফিসে ব্যবসায়িক সাফল্য ছিল না।[১০] তবে ছবিটিকে অপর্ণা সেনের অন্যতম ‘জনপ্রিয়’ চলচ্চিত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[১১]
↑Film World। T.M. Ramachandran। ১৯৭৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৫।
↑Tilak Rishi (২০১২)। "Shatrughan Sinha"। Bless You Bollywood!: A Tribute to Hindi Cinema on Completing 100 Years। Trafford Publishing। পৃষ্ঠা 90–। আইএসবিএন978-1-4669-3963-9। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৫।
↑Film World। T.M. Ramachandran। ১৯৮২। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১৫।