কুমিল্লা সরকারি কলেজ হচ্ছে বাংলাদেশের, কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। [১] [২] ১৯৬৮ সালে ২.৬৯৮৫ একর জমির উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজটি উচ্চ মাধ্যমিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা এবং স্নাতক পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত।
ইতিহাস
কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র পুলিশ লাইন এলাকায় এ অঞ্চলের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক জনাব অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, জনাব অ্যাডভোকেট সাজেদুল হক এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব মোহাম্মদ নূরুল হক এর প্রচেষ্টায় কুমিল্লা কলেজ নামে একটি বেসরকারি কলেজ ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় তাঁদেরকে অর্থ সহযোগীতা সহ অন্যান্য সহযোগিতা করেন এডভোকেট জনাব হারুনুর রশিদ, এডভোকেট জনাব রেজাউর রহমান, শিল্পপতি আবদুস সামাদ, জনাব নাছির উদ্দিন চৌধুরী , এডভোকেট জনাব মহসীনুজ্জামান, আমোদ পত্রিকার সম্পাদক জনাব ফজলে রাব্বি, জনাব ডাঃ লুৎফর রহমান এবং অধ্যাপক আবদুল ওহাব প্রমুখ। সর্বোপরি তৎকালীন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক জনাব আবদুছ ছালাম সি, এস ,পি এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। গর্ভনিং বডি ছাড়াও তখন অরগানাইজিং কমিটি নামে একটি পৃথক কমিটি ছিল। এতে কুমিল্লা শহরের বিশিষ্ট গন্যমান্য ব্যক্তিগণ অন্তর্ভুক্ত থেকে কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অবদান রাখেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জনাব বদিউল আলম গর্ভনিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ কলেজে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন জনাব আবদুল ওহাব। তিনি ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি সহ কলেজের ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থায় থেকেও তখনকার অধ্যক্ষ , অধ্যাপক মন্ডলী এবং কর্মচারীগণ এ কলেজে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। যে জায়গায় কলেজটি স্থাপিত সেটি একটি হিন্দু জমিদার বাড়ি ছিল। বাড়ির মালিকের নাম শ্রী যতিন্দ্র চন্দ্র কর ও রবিন্দ্র কর গং। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পূর্ব থেকেই তারা এ বাড়িতে বসবাস করতেন না এবং স্ব-পরিবারে ভারতে চলে যান। পাকিস্তান আমলে এ কলেজ স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত এখানে আঞ্চলিক E.P.R ক্যাম্প ছিল।[৩]
বর্তমানে কলেজের মালিকানায় জমির পরিমাণ ২.৬৮ একর। তিনটি টিন শেড বিল্ডিং এবং একটি পুরাতন এক তলা প্রশাসনিক ভবন নিয়ে একাদশ বিজ্ঞান , মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে মোট ৫৩১ জন ছাত্র- ছাত্রী ভর্তি ও মাধ্যমে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজের মালিকানায় অধ্যক্ষ মহোদয়ের বসবাসের জন্য ধর্মপুর মৌজার অন্তর্গত বাগিচাগাঁও এলাকায় সুপ্রভাত নামে একটি বাসভবণ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন জনাব এ. কে. এম রফিকুল আলম। বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকের সংখ্যা ছিল মাত্র ০৯ জন এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মোট ০৯ জন। উল্লেখ্য তখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের কয়েকজন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক বিনা পারিশ্রমিকে ক্লাশ নিয়ে কলেজ পরিচালনায় সহায়তা করেছিলেন। সে সময় – বাংলা , ইংরেজী, ইসলামের ইতিহাস , পৌরনীতি , অর্থনীতি , যুক্তিবিদ্যা , ব্যবস্থাপনা , হিসাববিজ্ঞান , পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন বিজ্ঞান , জীববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে স্নাতক কোর্স পঠিত হত। পরবর্তীতে কৃষিবিজ্ঞান চালু করা হয়। ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে ছাত্র – ছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রথম ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জনাব সৈয়দ আহমেদ। এ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ১৯৭২ সালে এ কলেজ কেন্দ্র থেকেই HSC পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। পাশের হার ছিল ৯০.৭৯% । কুমিল্লা কলেজ “ক্যাডেট সংগঠন” নামে একটি সংগঠন অধ্যাপক জনাব মোঃ তাজুল ইসলামের যোগ্য নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। মরহুম অধ্যাপক জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম আন্তক্রীড়া , বহিক্রীড়া , BNCC, স্কাউট ইত্যাদির মাধ্যমে কলেজের জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে ছাত্র-ছাত্রী , শিক্ষক ,কর্মচারী ও অত্র অঞ্চলের জনগনের দাবীর প্রেক্ষিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ কুমিল্লা টাউন হল ময়দান থেকে কলেজটিকে সরকারি করণের ঘোষণা দেন। এ দাবি আদায়ে তৎকালীন কুমিল্লার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক জনাব সৈয়দ আমিনুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তখন তিনি এ কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এ বিষয়ে তাঁকে অধ্যাপক জনাব মফিজুল ইসলাম এম, পি এবং জনাব আনসার আহমেদ এম, পি প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সহযোগতিা করেন । সরকারি করণের ঘোষণা বাস্তবায়নের কঠিন দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তখনকার এ কলেজের অধ্যাপক মরহুম আবদুল কুদ্দুস , অধ্যাপক আবদুল ওহাব , মরহুম জনাব আলী আহম্মদ , জনাব মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া , মিঃ বণিতা মোহন দে এবং জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম সহ তৎকালীন অন্যান্য শিক্ষকমন্ডলী ।[৩]
একাডেমিক বিভাগ
(বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোঃআমিনুল ইসলাম)
- ইংরেজি বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব সেলিম শিকদার)
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
(বিভাগীয় প্রধান: জনাব এ এইচ এম সফিউল্লাহ)
- দর্শন বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোঃ মিজানুর রহমান )
- রসায়ন বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: ড. দেওয়ান মোহাম্মদ মাহমুদুন্নবী)
- জীববিজ্ঞান বিভাগ (উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা) (বিভাগীয় প্রধান: অধ্যাপক নুরুল বাশার)
- হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোঃ আনোয়ারুল হক)
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব আব্দুর রাজ্জাক জনি)
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন)
- অর্থনীতি বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোঃ জিয়াউর রহমান)
- কৃষিশিক্ষা বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মনিরা খানম)
- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোঃ জালাল উদ্দিন)
- বাংলা বিভাগ (বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোহাম্মদ ওয়াজেদ আহসান)
- গণিত বিভাগ
(বিভাগীয় প্রধান: জনাব মোহাম্মদ রহিস মিয়া)
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র