জেনারেল ওম প্রকাশ মালহোত্রা, পিভিএসএম (জন্মঃ ৬ই আগস্ট ১৯২২; মৃত্যুঃ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫), যিনি জেনারেল ওপি মালহোত্রা নামেও পরিচিত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন এবং ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ মেয়াদে সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্তির পর তিনি 'ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস'তে নিযুক্ত হয়েছিলেন; ১৯৮১-১৯৮৪ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং পরে ভারতে রাজনৈতিক প্রশাসনের দায়িত্ব পান পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর এবং ১৯৯০-১৯৯১ সালে চন্ডিগড় শহরের প্রশাসকের হিসেবে। সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি ছিলেন ১৩তম।
পূর্ব জীবন
১৯২২ সালের আগস্ট মাসের ৬ তারিখে ওম কাশ্মীরের শ্রীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে শ্রীনগরের মডেল হাই স্কুল এবং শ্রী প্রতাপ কলেজ, শ্রীনগরে অধ্যায়ন করেন। এরপর তিনি বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরের গভর্নমেন্ট কলেজতে ভর্তি হন এবং এখান থেকেই তিনি দেরাদুনের ভারতীয় সামরিক একাডেমীতে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়ে যান।
সামরিক জীবন
১৯৪১ সালের নভেম্বর মাসে ওম প্রকাশ ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি ২য় লেফটেন্যান্ট হিসেবে প্রথমে দায়িত্ব পেয়েছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের রাজমাকে ২৬তম জ্যাকব (মাউন্টেন) ব্যাটারিতে। তিনি পরে ১৫ (ঝিল্ম) মাউন্টেন ব্যাটারিতে বদলী হন যেটা ৫০তম প্যারাশুট ব্রিগেডের অধীনে ছিলো এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বার্মা ফ্রন্টে জাপানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো। ওম একজন তরুণ কর্মকর্তা হিসেবে মণিপুর রাজ্যের 'সংশক যুদ্ধ'তে জাপানি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে বীরত্বপূর্ণ কাজ দেখান; এই যুদ্ধে তিনি আহত হন।[১][২] তিনি পরে ১৩ (দারদোনি) মাউন্টেন ব্যাটারির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড (উপ অধিনায়ক) এর দায়িত্ব পান।
মালহোত্রা ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণকেন্দ্র 'স্কুল অব আর্টিলারি দেওলালি'তে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৪৬ সালে যুক্তরাজ্যের 'রয়েল স্কুল অব আর্টিলারি লারখিল'তে লং গানারি স্টাফ কোর্স করতে যান। তিনি নভেম্বর ১৯৫০ তারিখ থেকে জুলাই ১৯৬১ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩৭তম কুর্গ এ্যান্টি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট, ২০তম লোকেটিং রেজিমেন্ট[৩] এবং ৪২তম ফিল্ড রেজিমেন্টের অধিনায়কত্ব করেন। এর মধ্যে তিনি নতুন দিল্লীতে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে কিছুকাল দায়িত্ব পালনসহ ওয়েলিংটনে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ কোর্স করে ফেলেন এবং পরে এই স্টাফ কলেজে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের সামরিক রাষ্ট্রদূত (মিলিটারি এ্যাটাশে) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; পরে পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরিও যান।
১৯৬৫ সালের আগস্টে মালহোত্রা সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কো থেকে ভারতে এসে ১ম সাঁজোয়া ডিভিশনের অধীনস্থ ১ম গোলন্দাজ ব্রিগেডের কমান্ডারের দায়িত্ব পান এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ সালে যোগ দেন 'শিয়ালকোট সেক্টর'তে।[৪] পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ থেমে গেলে ওম ১৬৭তম মাউন্টেন ব্রিগেডের নেতৃত্ব দেন যেটা নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ার এজেন্সির তাওয়াং জেলার 'সেলা পাস' এ অবস্থিত ছিলো। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল পদবীতে উন্নীত হন এবং সাউগরতে ৩৬তম পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন দু'বছরের জন্য; ১৯৬৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি প্রকৃত মেজর-জেনারেল পদবী লাভ করেন।
১৯৬৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখ হতে ১৯৭২ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি ৪ কোরের চীফ অব স্টাফ ছিলেন; এই ৪ কোর আসাম প্রদেশের তেজপুরে ছিলো এবং তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। [৫][৬] ১৯৭২ সালের ২৯শে মে তারিখে ওম ভারপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবী লাভ করেন এবং ঐ বছরেরই ১৫ অক্টোবরে তিনি প্রকৃত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন; পাঞ্জাবের জালান্ধারের ১১ কোরের কমান্ডারের দায়িত্ব পান ওম, এই কোরটি তিনি দুই বছরের জন্য নেতৃত্ব দেন।[৭] এরপর পুনেতে তিনি সাউদার্ন কমান্ড (দক্ষিণাঞ্চলীয় সেনা কমান্ড) এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চীফ (জিওসি-ইন-সি) হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯৭৬ সালে মালহোত্রা পরম বিশিষ্ট সেবা ম্যাডেল (পিভিএসএম) পদক প্রাপ্ত হন। ১৯৭৮ সালের ৩১শে মে তারিখে সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার আগে তিনি উপ সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির অনারারি সিনিয়র কর্নেল কমান্ড্যান্ট ছিলেন তিনি এবং নেপালী সেনাবাহিনীর অনারারি জেনারেল সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র
|
---|
কমান্ডার ইন চীফ (১৯৪৭ - ১৯৫৫) | | |
---|
সেনা প্রধান (১৯৫৫ – বর্তমান) | |
---|
|