কোনো বস্তুর ওপর অভিকর্ষীয় ক্ষেত্র দ্বারা প্রযুক্ত বলের মানকে ওজন বা ভার বলে।[১][২]
কোনো বস্তুর ভর m এবং পৃথিবীর কোন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে ঐ স্থানে বস্তুর ওজন হবে, W= mg.[৩]
ওজন ভরের আনুপাতিক হলেও ভর এবং ওজন মোটেও অভিন্ন নয়। ওজনকে সাধারণত W দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ওজনের একক হল বলের একক অর্থাৎ নিউটন (N)। বস্তুর ওজন স্প্রিং নিক্তির সাহায্যে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
ওজনের বিভিন্নতা
বস্তুর ওজন অভিকর্ষজ ত্বরণ g এর ওপর নির্ভরশীল কেননা বস্তুর ভর m তার মৌলিক ধর্ম। তাহলে কোন কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণ পরিবর্তিত হলে বস্তুর ওজনেও পরিবর্তন আসবে। সুতরাং স্থান ভেদে বস্তুর ওজনের পরিবর্তন হয়। উদাহরণ স্বরুপ নিম্নে ওজনের বিভিন্নতা দেখানো হল:
ভূপৃষ্ঠে অবস্থানের বিভিন্নতা অনুসারে
পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য: পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য অভিকর্ষজ ত্বরণ ক্রমশ বিষুবীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে বস্তুর ওজনও বৃদ্ধি পায়।[৪]
পৃথিবীর আকৃতিগত পার্থক্যের জন্য: আমরা জানি পৃথিবী সুষম গোলক নয় তাই পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের সকল স্থানের দূরত্ব সমান নয়। যেহেতু g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্বের ওপর নির্ভরশীল তাই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে g এর মানের পরিবর্তন হয়।
বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর পৃথিবীর ব্যসার্ধ সর্বাধিক বলে g এর মান সবচেয়ে কম। এ অঞ্চল থেকে যতই মেরু অঞ্চলের দিকে যাওয়া হবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ তত কমতে থাকে তথা g এর মান বাড়ে। এর ফলে বস্তুর ওজনও বাড়তে থাকে। আবার মেরু অঞ্চলে ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম হওয়ায় g এর মান এ অঞ্চলে সর্বাধিক ফলে এখানে বস্তুর ওজনও সবচেয়ে বেশি হয়।[৪]
পৃথিবীর অভ্যন্তরে
বিভিন্ন পরীক্ষণ থেকে দেখা গেছে ভূপৃষ্ঠ থেকে যত নিচে যাওয়া যায় অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও ততই কমতে থাকে। এতে করে পৃথিবীর যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায় বস্তুর ওজনও তত কমতে থাকে। পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূন্য সুতরাং পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ওজনও শূন্য হবে।[৪]
ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতর কোন স্থানে
ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় আভিকর্ষজ ত্বরণের মানও তত কমতে থাকে ফলে বস্তুর ওজনও তত কমতে থাকে। এ কারণে পাহাড় বা পর্বতের শীর্ষে বস্তুর ওজন কম হয়।[৪]
তথ্যসূত্র