এলিস এডগার পুস আচং (ইংরেজি: Ellis Achong; জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪ - মৃত্যু: ২৯ আগস্ট, ১৯৮৬) ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বেলমন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী চীনা বংশোদ্ভূত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও ফুটবলার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৫ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট-আর্ম আনঅর্থোডক্স বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন পুস আচং নামে পরিচিত এলিস আচং।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
পোর্ট অব স্পেনের বেলমন্টে এলিস আচংয়ের জন্ম। ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে স্থানীয় দল ম্যাপলে লেফট উইঙ্গার হিসেবে ফুটবল খেলতেন। এছাড়াও, ১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ত্রিনিদাদ ও টোবাগো জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে, ফুটবলের তুলনায় ক্রিকেট খেলাতেই তিনি অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। মূলতঃ তিনি বোলার হিসেবে খেলতেন।
১৯২৯-৩০ মৌসুম থেকে ১৯৩৪-৩৫ মৌসুম পর্যন্ত এলিস আচংয়ের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৩১-৩২ মৌসুমের আন্তঃঔপনিবেশিক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ত্রিনিদাদের পক্ষে খেলেন। ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে ৩/৭৪ ও ৭/৭৩ নিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন।[১] তন্মধ্যে, ৭/৭৩ বোলিং পরিসংখ্যানই তার ব্যক্তিগত সেরা ছিল।
১৯৩৩ সালে সবকটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়ে ৭১ উইকেট লাভ করেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩০.২৩ গড়ে ১১০ উইকেট পান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন এলিস আচং। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৩৫ তারিখে একই মাঠে ও একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম চীনা বংশোদ্ভূত খেলোয়াড় তিনি। বামহাতি আনঅর্থোডক্স স্পিন বোলিং করতেন। তার সম্মানার্থে এ ধরনের বোলিং কৌশলকে স্লো লেফট-আর্ম চায়নাম্যান নামকরণ করা হয়েছে।[২] টেস্ট খেলায় তিনিই প্রথমে আনঅর্থোডক্স বামহাতি স্পিন বোলিং করেননি। ধারণা করা হয় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার চার্লস লিউইলিন এ ধরনের বোলিং প্রথম করেছিলেন।
অংশগ্রহণকৃত ছয় টেস্টের সবকটিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৩০ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে খেলেছেন। তন্মধ্যে, তিনটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে ও বাদ-বাকী তিনটি ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলেছেন। ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। তিন টেস্টে নিয়ে গড়া সিরিজের প্রত্যেক টেস্টেই অংশ নেন। তবে, খুব কমই সফলতা পেয়েছিলেন। সর্বমোট আটটি টেস্ট উইকেট ৪৭.২৫ গড়ে লাভ করেছেন। তবে, আঞ্চলিক পর্যায়ের ক্রিকেট খেলাতেই অধিক সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি।
অবসর
শেষ টেস্টে অংশগ্রহণের পর ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে বেশ কয়েকটি ক্লাবের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন।[৩] তন্মধ্যে, ১৯৪৫সালে বার্নলির সদস্যরূপে টডমর্ডেন ক্লাবের বিপক্ষে ইনিংসের ১০টি উইকেটই কব্জা করেন।[৪] ১৯৫২ সালে তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় প্রত্যাবর্তন করেন।
মার্চ, ১৯৫৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের চতুর্থ টেস্টে আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনা করেছিলেন। ড্র হওয়া বিরাটি রানের খেলায় প্রথম ইনিংসে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬৮১/৮ তুলে। থ্রি ডব্লিউজ নামে পরিচিত এভারটন উইকস, ফ্রাঙ্ক ওরেল ও ক্লাইড ওয়ালকট এবং সফরকারীদের ৫৩৭ রানের মধ্যে পিটার মে ও ডেনিস কম্পটন সেঞ্চুরি করেন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচের দায়িত্বে অবতীর্ণ হন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোচ এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ক্রিকেট দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে মনোনীত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন তিনি। ১৯৩৩ সালের ইংল্যান্ড সফরে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন ও সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। [৫] ২৯ আগস্ট, ১৯৮৬ তারিখে সেন্ট অগাস্টিন এলাকায় ৮২ বছর বয়সে এলিস আচংয়ের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ