উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (৬ জুন ১৮৭৯—৪ এপ্রিল ১৯৫০) একজন বাঙালিভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, সম্পাদক ও লেখক। তাঁর রচিত বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হল নির্বাসিতের আত্মকথা। অন্তঃপুরে সাধক, প্রথম গুণের লেখক এবং জন্মগত দেশপ্রেমিক ছিলেন উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯০৮ সালের ২ মে মানিকতলা গার্ডেন হাউস থেকে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ও অন্যান্যদের সঙ্গে মুজাফফরপুর বোমা মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
জীবনী
হুগলি জেলারচন্দননগরের গোন্দলপাড়ায় ১৮৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন উপেন্দ্রনাথ। অল্প বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে ভারবর্ষের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান, পরে আবার সংসারে ফিরে আসেন। উপেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত রমানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র। চন্দননগরের ডুপ্লে কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করে কলকাতা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে যোগ দিলেও ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য পড়া শেষ করতে পারেন নি। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন তিনি। কলকাতার ডাফ কলেজে বি.এ. পাঠরত অবস্থায় যুগান্তর দলের সংস্পর্শে আসেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি যুগান্তর ও বন্দে মাতরম পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯০৭ সালে বিখ্যাত আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় মানিকতলার বাগানবাড়ী থেকে অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, কানাইলাল দত্ত, দেবব্রত বসু,হৃষিকেশ কাঞ্জিলাল ও আরও অনেক বিপ্লবীর সঙ্গে উপেন্দ্রনাথও ধরা পড়েন। তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। সেলুলার জেলে তাঁর দীর্ঘ বারো বছর কারাবাসের কাহিনী নিয়ে লেখেন নির্বাসিতের আত্মকথা বইটি।[১] মুক্তি লাভের পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশেরনারায়ণ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন, বারীন্দ্রকুমার ঘোষের সঙ্গে বিজলী পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর পর তিনি নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক আত্মশক্তি। দেশ বিরোধী লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকার আবার উপেন্দ্রনাথকে ৩ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। ১৯২৬-এ মুক্ত পেয়ে ফরোয়ার্ড, লিবার্টি, অমৃতবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ করতেন। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে আমৃত্যু তিনি দৈনিক বসুমতী পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন।[২] শেষ জীবনে হিন্দু মহাসভার সাথে যুক্ত হন ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৩][৪]