ইসলম আব্দুগানিয়েভিতজ করিমভ (সিরিলিকউজবেক: Ислом Абдуғаниевич Каримов; [Ислам Абдуганиевич Каримов, Islam Abduganijevič Karimov] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: text has italic markup (সাহায্য); জন্ম: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৩৮ - মৃত্যু: ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬) সমরখন্দে জন্মগ্রহণকারী উজবেকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। উজবেকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন ইসলাম করিমভ।
রাজনৈতিক জীবন
জন্মকালীন সময়েই তিনি মাতৃহারা হন। অর্থনীতি ও প্রকৌশলবিদ্যায় পড়াশোনা করেন।[২] ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কম্যুনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে উজবেকিস্তানে প্রথম সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। ২৪ মার্চ, ১৯৯০ তারিখে উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি মনোনীত হন। তার পূর্বসূরী রফিক নিশোনভ আন্তঃজাতিগোষ্ঠীর সংঘাত ও ফারগানা অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার কারণে অযোগ্য ঘোষিত হবার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
৩১ আগস্ট, ১৯৯১ তারিখে তিনি উজবেকিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৯১ তারিখে উজবেকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ৯ জানুয়ারি, ২০০০ তারিখে ৯১.৯% ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, সুষ্ঠু বা স্বচ্ছ কোনটাই ছিল না এবং উজবেক ভোটারদের প্রকৃত প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না। একমাত্র বিরোধী প্রার্থী হিসেবে ছিলেন আব্দুলহাফিজ জালালভ। কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের লক্ষ্যে তিনি অংশ নিয়েছেন এবং জনসমক্ষে করিমভকে ভোট দিয়েছেন বলে জানান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলের উপর আরো কঠোর শর্তাবলী প্রয়োগ করেন। বিচার মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল সভা-সমাবেশ, প্রকাশনা ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয়, সামরিকভিত্তিক সৃষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেন। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০১ তারিখের আক্রমণের পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগতকারণে মিত্রশক্তি হয়। কার্শি-খানাবাদ ঘাঁটিতে ৮০০ সৈনিকের উপস্থিতি ছিল।[৩] ২০০৫ সালে করিমভ সরকার ইউ.এস. ঘাঁটিকে দেশত্যাগ করতে বলে। এরপর জুলাই, ২০০৫ সালে ঐ স্থান ত্যাগ করে মার্কিনবাহিনী।
উজবেকিস্তানের ইসলামিক আন্দোলন ও হিজব-উত-তাহরির নামীয় দুই ইসলামপন্থী সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সরকার।[৪] সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন ও বিচার ছাড়াই কারাভোগ করছেন।
সমালোচনা
২০১৫ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পুণঃনির্বাচিত হন তিনি। ৯০.৩৯% ভোট পেয়ে বর্তমান সংবিধানে তৃতীয় মেয়াদে তিনি এ দায়িত্ব পান। বেশ কয়েকবছর ধরে প্যারেড সাময়িকী করিমভকে বিশ্বের অন্যতম মন্দ স্বৈরশাসকরূপে আথ্যায়িত করে আসছে। এর কারণ হিসেবে নির্যাতনের কৌশল, গণমাধ্যমে বিধি-নিষেধ প্রয়োগ ও ভুয়া নির্বাচনের কথা তুলে ধরা হয়।
ডিসেম্বর, ১৯৯৫ সালে স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে তিনি দন্তবিহীনরূপে আখ্যায়িত করেন। রেডিও লিবার্টি’র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত আজপ্যাক ইন্টারনেট সার্ভারের মাধ্যমে নিষিদ্ধঘোষিত ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়া হয়।[৫]
ব্যক্তিগত জীবন
করিমভের পারিবারিক ইতিহাস অজানা ও তার পিতা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। মনে করা হয় যে, তিনি হয় তাজিক বা ইহুদি এবং তার মা উজবেক ছিল। নাতালিয়া পেত্রোভনা কাচমিকে ১৯৬৪ সালে বিয়ে করেন। বিবাহ-বিচ্ছেদের পূর্বে তাদের সংসারে পিতর নামীয় পুত্র ছিল।[৬] পরবর্তীতে তাতিয়ানা আকবারোভনা করিমভা নাম্নী এক তাজিক ও রুশ বংশোদ্ভূত নারী অর্থনীতিবিদের পাণিগ্রহণ করেন।[৭][৮] তাদের দুই কন্যা রয়েছে।
দেহাবসান
২০১৬ সালের পূর্ব-পর্যন্ত করিমভের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সরকারী কর্মকর্তাদের মাঝে কখনো আলোচনা করতে দেখা যায়নি এবং যে-কোন ধরনের তথ্য গোপনীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হতো।[৯] মার্চ, ২০১৩ সালে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, তার হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে।[১০] কিন্তু তা অগ্রাহ্য করা হয়।[১১]
২৬ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে করিমভ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তার কন্যা লোলা করিমভা তিলিয়ায়েভা জানান যে, তার অবস্থা একই অবস্থায় রয়েছে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ২৯ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে ফারগানা নিউজ এজেন্সি থেকে অসমর্থিত সূত্র জানানো হয় যে, তিনি মারা গেছেন। ৩১ আগস্ট, তিলিয়ায়েভা আরোগ্যলাভের দিকে তার অগ্রসরতার কথা জানান।[১২] ১ সেপ্টেম্বর তারিখে উজবেকিস্তানের স্বাধীনতার ২৫তম বার্ষিকীতে করিমভের বার্তা টিভি উপস্থাপক পড়ে শোনান। তিলিয়ায়েভা তার পিতার আরোগ্য লাভে জনসমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন।[১৩]
২ সেপ্টেম্বর সকালে করিমভের গুরুতর অসুস্থতার কথা ঘোষণা করা হয়।[১৪] এক ঘণ্টা পর, তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইল্দরিম টেলিভিশন স্বাক্ষাৎকারে করিমভের মৃত্যুর কথা জানান। এছাড়াও, কূটনৈতিক সূত্র থেকে তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়।[১৫] এ সকল প্রতিবেদন উজবেক সরকার সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেন।