ইয়ান ডেভিড ব্ল্যাকওয়েল (ইংরেজি: Ian Blackwell; জন্ম: ১০ জুন, ১৯৭৮) ডার্বিশায়ারের চেস্টারফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী আম্পায়ার ও সাবেক পেশাদার ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।[১]ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০২ থেকে ২০০৬ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ার, ডারহাম ও সমারসেট এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টস দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘ব্ল্যাকি’ ডাকনামে পরিচিত ইয়ান ব্ল্যাকওয়েল।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
মারমুখী ব্যাটসম্যান ও শান্ত প্রকৃতির বামহাতি স্পিনার হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তার ব্যাটিংয়ের ধরন অনেকাংশেই বিখ্যাত ক্রিকেটার ইয়ান বোথামের অনুরূপ ছিল। অনেক সময়ই ব্যাট ও বলের সমন্বয়হীনতার কারণে দলের বিপদ ডেকে আনতেন।
১৯৯৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। স্টিভ ওয়াহকে আউটের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো উইকেট লাভ করেন। ২০০২ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শুরুরদিকের খেলায় ম্যাথু হগার্ডের এক ওভারে সময়োপযোগী ২৮ রান তুলেন। ঐ একই বছর সিএন্ডজি ট্রফির সেমি-ফাইনালে ৫৩ বলে ৮৬ রান তুলে দলকে জয় এনে দেন। ২০০৫ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন।
সমারসেটে যোগদান
ডার্বিশায়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন ইয়ান ব্ল্যাকওয়েল। এরপর, ডার্বিশায়ারের অধিনায়ক ডমিনিক কর্কের সাথে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়ে দল ত্যাগ করেন ও ২০০০ সালে সমারসেটে যোগ দেন। ২০০৫ সালে গ্রেইম স্মিথ দায়িত্ব ত্যাগ করলে শেষদিকে তিনি সমারসেটের অধিনায়কত্ব করেন। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের অধিনায়করূপে মনোনীত হন। কাঁধের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়লে তিনি কয়েকটি খেলায় অনুপস্থিত থাকেন। মৌসুমগুলোর বাদ-বাকী সকল খেলায় তার অংশগ্রহণ ছিল।
ডারহামে যোগদান
২০০৮ সাল শেষে ইয়ান ব্ল্যাকওয়েল সমারসেট থেকে চলে আসেন ও ডারহামে যোগ দেন।[২] আঘাত থেকে সেড়ে ওঠার পর ধীরগতিতে অগ্রসর হন ও আদর্শ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে থাকেন। জাস্টিন ল্যাঙ্গারের নেতৃত্বে দলে নিজের জীবনধারা পরিবর্তনের চেষ্টা চালান ও মিশ্র ফলাফল করেন। তবে, বিস্ময়করভাবে তাকে একদিনের দলের বাইরে রাখা হয়। শারীরিকভাবে সুস্থতা ও অধিনায়ক জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সাথে মতবিরোধের ফলে তাকে সমারসেট ত্যাগ করতে হয়েছিল।[৩]
শীত মৌসুমে প্রায় ১০ কেজি (২২ পা) ওজন কমান।[৪] ২০০৯ সালে ডারহামের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। উদ্বোধনী খেলায় সাজিদ মাহমুদ, কবির আলী, টিম ব্রেসনান ও আদিল রশিদের বোলিং মোকাবেলান্তে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে মনোরম সেঞ্চুরি করেন।[৩] ঐ মৌসুমে ডারহামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। দলের চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে ৪০.৯৫ গড়ে ৮০১ রান ও ২৩.৫৩ গড়ে ৪৩ উইকেট পান। ৪০-এর কম গড়ে এগারো সহস্রাধিক রান ও ৩৫.৯১ গড়ে ৩৯৮ উইকেট পেলেও ২০১২ সালে ডারহামে তিনি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হন।
দলে প্রত্যাখ্যান
মে মাসের পর তাকে ডারহামের চ্যাম্পিয়নশীপের দলে রাখা হয়নি। তাসত্ত্বেও, মৌসুমের শেষদিকে তাকে ওয়ারউইকশায়ার দলে কয়েক সপ্তাহের জন্যে কর্জকৃত খেলোয়াড় হিসেবে নেয়া হয়। আগস্ট থেকে চার সপ্তাহের জন্যে ওয়ারউইকশায়ারের স্পিনার জিতেন প্যাটেলের অনুপস্থিতিতে তাকে দলে যুক্ত করা হয়েছিল।[৫] ঐ দলের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন ও লর্ডসে সিবি৪০ প্রতিযোগিতায় সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন।
২০১২ সালের পুরোটা সময় দ্বিতীয়বার কাঁধের অস্ত্রোপচারের ফলে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন। ডারহামের পক্ষে মৌসুমের প্রথমার্ধ্বে কয়েকটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১২ সালের দ্বিতীয়ার্ধ্বে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলেছেন।[৬] ২০১৩ সালের প্রথম তিন কিংবা চার মাস সুস্থ ছিলেন। মেয়াদের এক বছর পূর্বেই ডারহাম কর্তৃপক্ষ চুক্তি বাতিল করে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্ট ও চৌত্রিশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন ইয়ান ব্ল্যাকওয়েল। ১ মার্চ, ২০০৬ তারিখে নাগপুরে স্বাগতিক ভারত দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
পাকিস্তান গমনার্থে তাকে ওডিআই দলে নেয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০০২ তারিখে কলম্বোয় জিম্বাবুয়ে দলের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে তার। ১৫ এপ্রিল, ২০০৬ তারিখে ইন্দোরে স্বাগতিক ভারত দলের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন তিনি।
২০০২ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলকে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ড দল প্রতিযোগিতার শিরোপা জয় করেছিল। ২০০২-০৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ভিবি সিরিজে ০, ০, ০ ও ১ রান তুলেন। তাসত্ত্বেও, ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে তাকে দলে রাখা হয়।
ভারত গমন
২০০৬ সালে অ্যাশলে জাইলস ভারত গমন করা থেকে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করলে ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলকে দলে অন্তর্ভূক্তির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। প্রস্তুতিমূলক খেলাগুলোয় বেশ ভালো খেলেন। ফলশ্রুতিতে, নাগপুরে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে তার অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ তাকে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করার জন্যে আমন্ত্রণ জানাননি। ভারতের প্রথম ইনিংসে ছয়টি ব্যয়বহুল ওভার বোলিং করেন। তুলনান্তে সতীর্থ বামহাতি স্পিনার মন্টি পানেসর ৪২ ওভার বোলিং করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুতে মিতব্যয়ী বোলিং করলেও ভারত দল সফরকারীদেরকে বিরাট রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হবার আমন্ত্রণ জানায়। ব্যাটসম্যানদের রান আটকাতে তাকে আনা হলেও প্রথম ওভারেই ১৮ রান দেন। ব্যাট হাতে একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলেও স্নায়বিক চাপে ভুগে মাত্র চার রান তুলেন।
ফলশ্রুতিতে, দ্বিতীয় টেস্টে তাকে বাদ দেয়া হয় ও লিয়াম প্লাঙ্কেটকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তাসত্ত্বেও, ওডিআই সিরিজে তাকে দলের প্রথম পছন্দের স্পিনার হিসেবে রাখা হয়। কিন্তু, ঐ সিরিজে তারা ৫-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়। তবে, ব্ল্যাকওয়েলের অবদান ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। এক পর্যায়ে তাকে দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে সমূহ সম্ভাবনায় রাখা হয়। প্রথম ওডিআইয়ে দশ ওভারে মাত্র ২৪ রান খরচায় এক উইকেট পান। এটিই তার সর্বাপেক্ষা মিতব্যয়ী ওডিআই বোলিং ছিল। এরপর ২/৩৯ ও ২/২১ পান।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি টেস্টে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু, কাঁধের আঘাতে পুরো মৌসুমেই মাঠের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইংল্যান্ডের ওডিআই দলে স্পিনার অন্তর্ভূক্তি ঘটে ও দল নির্বাচকমণ্ডলীর নজরের বাইরে চলে যান। ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের ইচ্ছে থাকলেও মাইকেল ইয়ার্ডি’র উত্থানে তা ব্যর্থ হয়ে যায়।
মার্চ, ২০১৩ সালে ডারহাম কর্তৃপক্ষ ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলের সাথে তাদের চুক্তিনামা স্থগিত করে। ফলশ্রুতিতে, তিনি পেশাদারী ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। ঐ শীতে তৃতীয়বার তার অস্ত্রোপচার হয়। বাম কাঁধে বাতের কারণে চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।[১]
ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে ইয়ান ব্ল্যাকওয়েলকে ইসিবি’র প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সংরক্ষিত আম্পায়ারের তালিকায় যুক্ত করে।[৭]
↑Cricinfo staff (১৮ নভেম্বর ২০০৮), Ian Blackwell signs for Durham, Cricinfo.com, সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০০৯উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)