আবুল হাসান আলি ইবনে হামজাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওসমান (أبو الحسن على بن حمزة بن عبد الله بن عثمان); বাহমান ইবনে ফিরোজ (بهمن بن فيروز); আবু আবদুল্লাহ (أبو عبد الله).
আল-কিসায়ী (الكسائي) বা যাকে কখনো বলা হয় বাহমান ইবনে ফিরুজ (بهمن بنسورز) বা আবু আব্দুল্লাহ (أبو عبد الله) (মৃত্যু ৮০৪ বা ৮১২) নামেও পরিচিত। তবে তিনি আল-কিসায়ি নামে-ই বেশি পরিচিত ও প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি ইসলামি পণ্ডিত, ইরানি বংশোদ্ভূত কুফির আরবি ভাষাবিদ, ব্যাকরণবিদ,আল-কুরআনের সুবিজ্ঞ ক্বারী,লেখক ও গবেষক, মুসলিম বিশ্বে ইলমে কিরাআতের ক্ষেত্রে যাকে বিবেচনা করা হয় সাত কিরাআতের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব ও আলিমে দ্বীন। ভাষা ও ব্যাকরণে তিনি ছিলেন কুফি পণ্ডিতদের ইমাম।
জন্ম ও বংশ
আল-কিসায়ি খলিফা আবদুল মালিকের শাসনামলে ৮০ হিজরির[২] ইরাকের কুফায় একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একই বছর ইমাম আযম আবু হানিফাহ, শেখ জায়াত কাবাইও জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
জীবনী
আল-কিসায়ি বাগদাদে আব্বাসি খলিফা হারুন আল-রশিদের দরবারে তার দুই রাজকুমার আল-মামুন এবং আল-আমিনের গৃহশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তার প্রাথমিক জীবনীকার আল-নাদিম আবু আল-তাইয়্যিবের লিখিত বিবরণ সম্পর্কে বলেছেন যে খলিফা হারুন আল-রশিদ তাকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন।[৩] খলিফা খুরাসানের রাজধানী হিসেবে আল-রাইতে যখন আদালত স্থানান্তরিত করেন, আল-কিসাই তখন সেখানে চলে যান। একসময় আল-কিসায়ি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অসুস্থতার সময় খলিফা হারুন আল-রশিদ তাকে নিয়মিত দেখতে যেতেন। আল-কিসায়ি মারাগেলে তার মৃত্যুতে খলিফা গভীর শোক প্রকাশ করেন। সম্ভবত ৮০৪ সালে (১৮৯ হিজরি)-তে আল-কিসায়ি মৃত্যু বরণ করেন। যেদিন খলিফা হারুন আল-রশিদের হানিফাহ কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আল-শায়বানী[৪][৫]ও মারা যান। আর এটাও কথিত আছে যে তিনি ৮১২ সালে (১৯৭ হিজরিতে) বিচারক আবু ইউসুফের সাথে মৃত্যু বরণ করেন ।[৬] ইবনে আল-কুফির বিবরণ অনুসারে আল-কিসায়ী মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত শিক্ষক হিসেবে আল-ফাররা শিক্ষাদানের জন্য নির্বাচিত হন।[৭][৮]
বিতর্ক
বাগদাদেআব্বাসীয় উজির ইয়াহিয়া ইবনে খালিদ প্রমিত আরবির ব্যবহার নিয়ে সিবাওয়েহর সাথে বিতর্ক করেন। বসরার শিক্ষালয় ও কুফার প্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষালয়ের আলকিসাই আলকুফির প্রতিনিধিত্বে এই বিতর্ক হয়।[৯]
এই ঘটনাটি মাসালাত আল জুনবুর বা "ভ্রমরের প্রশ্ন" নামে পরিচিত কারণ বিতর্কে একটি কথা ছিল, যার অনুবাদ এরূপ “আমি সবসময় ভেবেছি যে কাকড়াবিছের হুল ভ্রমরের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক এবং এ বিষয়ে নিশ্চিত”।[১০] সিবাওয়েহ প্রস্তাব করেন:[১১]
...ফাইদা হুয়া হিয়া, ইংরেজিতে ... sure-enough he she
অর্থাৎ “sure-enough he (the scorpion, masc.) is she (the most painful one, fem)”, আরবিতে এধরনের অবস্থায় is নামক কোনো ক্রিয়াপদ ব্যবহার করতে হয় না।
অন্যদিকে কিসাই যুক্তি তুলে ধরেন:
…ফাইদা হুয়া ইয়াহা, ইংরেজিতে ... sure-enough he her
সিবাওয়েহ তত্ত্বীয় ব্যাকরণে তার অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরেন এবং বলেন যে বিধেয় এর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিভক্তি কার্যকর নয়। কিন্তু আল কিসাই চারজন বেদুইনকে উৎকোচ দিয়ে নিয়ে আসেন যাতে তার বক্তব্যকে সমর্থন করা হয়।[১০][১৩] তারা তার বক্তব্যকে সমর্থন করে সিবাওয়েহর বক্তব্য ভুল প্রতিপন্ন করে। সিবাওয়েহ এরপর বিতর্ক স্থান ত্যাগ করে চলে যান।[১১] আল-কিসায়ি বিজয়ী ঘোষিত হয়।
উত্তরাধিকার
হিশাম ইবনে মুয়াবিয়া[১৫] এবং ইয়াহইয়া আল-ফাররা, এই দুইজন তার উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন। আর তার কিরআত পদ্ধতির প্রাথমিক ধারক বাহক ছিলেন আবু আল-হারিস ইবনে খালিদ আল-লায়স (মৃত্যু ৮৪৫)[১৬][১৭] এবং আল-দাওরি। [২০][২২]
এছাড়া তার আরও অনেক ছাত্র-শিক্ষার্থী ছিল যারা তার নিকট থেকে কিরাআত বর্ণনা করেন। এদের মধ্যে:-
নাসির বিন ইউসুফ,
কুতায়বা বিন মাহরান,
আহমেদ বিন সুরায়জ,
আবু উবাইদ,
খালাফ বিন হিশাম এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। তার কাছ থেকে প্রসিদ্ধ বর্ণনাকারীরা হলেন আল-লায়স এবং হাফস আল-দাওরি, যে দুজনের নাম পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
↑Abū al-Ḥasan ‘Alī ibn Muḥammad ibn ‘Ubayd ibn al-Zubayr al-Asadī ibn al-Kūfī (ca. 868-960) was a scholar and calligrapher. See Khatib al-Baghdādī XII, § 81, 6489; YāqūtIrshād, VI (5), 326; Nadīm (al-), pp. 6, 145, 151-8, 162, 173-4, 192, 864, 1033.