অ্যারোমেটিক সালফোনেশন একটি জৈব প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন অ্যারন অর্থাৎ সুগন্ধযুক্ত যৌগের একটি হাইড্রোজেন পরমাণু ইলেক্ট্রোফিলিক বিক্রিয়া (জৈব রসায়নে, ইলেক্ট্রোফিলিক সংযোজন বা বিক্রিয়া এমন একটি সংযোজন বিক্রিয়া যেখানে কোনও রাসায়নিক যৌগে একটি পাই বন্ধন ভেঙে দুটি নতুন সিগমা বন্ধন গঠিত হয়।) সাহায্যে সালফোনিক অ্যাসিডের কার্যক্ষম গ্রুপ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। অ্যারিল সালফোনিক অ্যাসিড কাপড় কাচার সাবান বা ডিটারজেন্ট, রঞ্জক পদার্থ বা ডাই এবং ড্রাগ হিসাবে ব্যবহার হয়।
রাসায়নিক গঠন প্রক্রিয়া
সাধারণ অবস্থায় সুগন্ধ যুক্ত যৌগের সাথে সালফিউরিক অ্যাসিড যোগ করে উত্তপ্ত করা হয়,[১] বিক্রিয়ার রাসায়নিক সুত্রটি নিচে দেওয়া হয়েছেঃ
C6H6 + H2SO4 → C6H5SO3H + H2O
এই ইলেক্ট্রোফিলিক বিক্রিয়ায় সালফার ট্রাইঅক্সাইড মূল ইলেক্ট্রোফাইল(রসায়নে, একটি ইলেক্ট্রোফাইল একটি রাসায়নিক উপাদান যা একটি ইলেক্ট্রন যুগল গ্রহণ করে নিউক্লিওফাইলের সাথে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে। নিউক্লিউফাইল হল এমন এক উপাদান যা ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে ইলেক্ট্রোফাইলের সাথে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে) হিসাবে কাজ করে।
এই বিক্রিয়ায় প্রতিসাম্য আনার জন্য আর্দ্রতা বা জল শোষণকারী উপাদান হিসাবে থাইনল ক্লোরাইড যুক্ত করা হয় সাধারনত। বিক্রিয়ার রাসায়নিক সুত্রটি নিচে দেওয়া হয়েছেঃ
C6H6 + H2SO4 + SOCl2 → C6H5SO3H + SO2 + 2 HCl
ক্লোরোসালফিউরিক অ্যাসিডও এই বিক্রিয়ার একটি কার্যকর উপাদান হিসাবে গন্য করা হয়। বিক্রিয়ার রাসায়নিক সুত্রটি নিচে দেওয়া হয়েছেঃ
C6H6 + HSO3Cl → C6H5SO3H + HCl
অ্যারোমাটিক নাইট্রেশন এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রফিলিক অ্যারোম্যাটিক(সুগন্ধ প্রস্তুতকারী) প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার সঙ্গে অ্যারোমাটিক সালফোনেশন -এর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, এই বিক্রিয়াটি উভমুখী। সালফোনেশনট প্রক্রিয়া ঘনীভূত অ্যাসিডিক উপস্থিতিতে ঘটে এবং ডিসালফোনেশন প্রক্রিয়া মৃদু গরম জলীয় অ্যাসিডের উপস্থিতিতে হয়। উভমুখী হওয়ার জন্য উৎপাদিত উপাদানের সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য রক্ষিত হয় এবং বজায় থাকে। এই বিক্রিয়ার ইলেক্ট্রন প্রত্যাহার প্রভাবের জন্য সালফোনেট রক্ষনকারী গ্রুপ ইলেক্ট্রোফিলিক অ্যারোমাটিক প্রতিস্থাপনকে রক্ষা করে। অনুর আভ্যন্তরিন গঠনে কিছু পরমানু এমন অবস্থানে থাকে যারা কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন হতে পারে, সেই অবস্থানকে প্রভাবিত করতে ইলেক্ট্রন বর্জনকারী গ্রুপ হিসাবেও এদের ব্যবহার হয়।[২]
বিশেষ সালফোনেশন পদ্ধতি
ডাইরেকশন সালফোনেশন ছাড়াও কোন যৌগে সালফোনেশন গ্রুপ যোগ করার আরও অনেক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে,
পিরিয়া বিক্রিয়া
সালফনেশনের শ্রেণীভুক্ত একটি প্রচলিত ধ্রুপদী রাসায়নিক বিক্রিয়ার নাম হল পিরিয়া বিক্রিয়া (১৮৫১ সালে বিজ্ঞানী রাফায়েল পিরিয়া এই পদ্ধতি প্রচলন করে)। এই পদ্ধতিতে নাইট্রোবেঞ্জিনের সাথে ধাতব বিসুলফাইট বা HSO3− আয়নের বিক্রিয়ায়; সম্মিলিত নাইট্রো গ্রুপ বিজারন এবং সালফোনেশন -এর ফলস্বরুপ অ্যামিনোসালফিউনিক অ্যাসিড প্রস্তুত হয়। [৩][৪]
টাইরার সালফোনেশন প্রক্রিয়া
টাইরার সালফোনেশন প্রক্রিয়া ১৯১৭ সালে প্রচলিত হয়। [৫] এই সময়ে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে নতুন সালফোনেশন পদ্ধতির আবিষ্কার হয়। টাইরার পদ্ধতিতে বেঞ্জিন -এর বাস্পকে ৯০% সালফিউরিক অ্যাসিড সংবলিত একটি পাত্রের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয় এবং সেই পাত্রের উষ্ণতা ১০০ থেকে ১৮০° সেলসিয়াস অবধি বৃদ্ধি করা হয়। জল এবং বেনজিন অবিচ্ছিন্নভাবে একটি শীতলতা প্রদানকারী যন্ত্রের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয় এবং বারবার বেনজিন স্তরকে পাত্রের মধ্যে যোগ করা হয়। এইভাবে ৮০% সালফোনেট পন্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
ব্যবহার
রঞ্জক পদার্থ এবং ঔষধ সংক্রান্ত পন্য প্রস্তুতিতে অ্যারোমাটিক সালফিউনিক অ্যাসিড একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যবর্তী উপাদান। অ্যানিলিনের সালফোনেশনের মাধ্যমে বৃহৎ পরিমানে সালফা ওষুধের ড্রাগ প্রস্তুত হয়।
পলিস্টেয়ারিনের সালফোনেশনের মাধ্যমে মধ্যম মাত্রার পলিস্টেয়ারিন সালফোনেট প্রস্তুত হয় যা মৃদু জল প্রস্তুতিতে সাধারণ আয়ন প্রতিস্থাপন উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়।
অ্যারিল সালফোনিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া
জলে উত্তপ্ত হওয়ার সময় অ্যারিল সালফোনিক অ্যাসিডের ডিসালফোনেশন হয়।
↑Otto Lindner, Lars Rodefeld "Benzenesulfonic Acids and Their Derivatives" in Ullmann's Encyclopedia of Industrial Chemistry 2005, Wiley-VCH, Weinheim.ডিওআই:10.1002/14356007.a03_507
↑T.W> Graham Solomons: Organic Chemistry, 11th Edition, Wiley, Hoboken, NJ, 2013, p. 676, আইএসবিএন৯৭৮-১-১১৮-১৩৩৫৭-৬.