অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (ইংরেজি: Australian Open) হল চারটি টেনিসগ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের প্রথমটি যা প্রতিবছর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ১৯০৫ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত গ্রাস কোর্টে অনুষ্ঠিত হলেও ১৯৮৮ সাল থেকে হার্ড কোর্টে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ম্যাট্স উইল্যান্ডার হলেন একমাত্র পুরুষ খেলোয়াড় যিনি গ্রাস ও হার্ড দুই কোর্টেই এই টুর্নামেন্ট জিতেছেন।
অন্যান্য গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও পুরুষ এবং মহিলা একক; পুরুষ, মহিলা ও মিশ্র দ্বৈত; জুনিয়র, হুইলচেয়ার ও লিজেন্ডদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এই ওপেনের দুটি প্রধান কোর্ট হচ্ছে রড লেভার অ্যারিনা ও হাইসেন্স অ্যারিনা। কোর্ট দুটোর বিশেষ ছাদ রয়েছে যেগুলো বেশি গরম বা বৃষ্টিতে বন্ধ রাখা যায়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডন এ দুটি স্ল্যামই কেবল ইনডোরে খেলা হয়।
এটি গ্রীষ্মের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হয়। তাপমাত্রা অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নীতি গ্রহণ করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সাধারণত প্রচুর দর্শকের সমাগম ঘটে। ২০১০ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একদিনে ৭৭,০৪৩ দর্শকের উপস্থিতি এবং সর্বমোট ৬৫৩,৮৬০ দর্শকের উপস্থিতি ঘটে যা যে-কোন গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য রেকর্ড।[২]
২০ বছর ধরে থাকা রিবাউন্ড এইস সারফেস ২০০৮ সালে থেকে প্লেক্সিকুশন সারফেসে পরিবর্তন করা হয়।[৩] এই নতুন সারফেসের সুবিধা হল এটি বেশি স্থায়ী এবং বেশি তাপমাত্রার জন্য উপযোগী। এই পরিবর্তন মতবিরোধের সম্মুখীন হয় কারণ এটি ইউএস ওপেনে ব্যবহৃত ডেকোটার্ফ সারফেসের মতোই।[৪]
পুরুষ এককে রজার ফেদেরার এবং মহিলা এককে সেরেনা উইলিয়ামস রিবাউন্ড এইস ও প্লেক্সিকুশন এ দুই সারফেসেই এই টুর্নামেন্ট জিতেছেন।
ইতিহাস
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন টেনিস অস্ট্রেলিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা আগে লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়া নামে পরিচিত ছিল। এই টুর্নামেন্ট প্রথমে অস্ট্রেলেশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ নামে পরিচিত ছিল। ১৯২৭ সালে এর নাম হয় অস্ট্রেলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন।[৫] ১৯০৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি ও নিউজিল্যান্ডের দুটি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছেঃ মেলবোর্ন (৫৪ বার), সিডনি (১৭ বার), অ্যাডিলেড (১৪ বার), ব্রিসবেন (৭ বার), পার্থ (৩ বার), ক্রাইস্টচার্চ (১৯০৬ সালে) এবং হাস্টিংস (১৯১২ সালে)।[৫]
ভৌগোলিক দূরত্ব ও যাতায়াত সমস্যার কারণে প্রথমদিকের টুর্নামেন্টগুলোতে খেলোয়াড়ের অভাব ছিল। ১৯৬৯ সালে টুর্নামেন্টটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন নামে ব্রিসবেনে সকল খেলোয়াড়ের জন্য উন্মুক্ত হিসেবে আয়োজিত হয়।[৬]
১৯৭২ সালে যখন এটি প্রতি বছর একই শহরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কুইয়ং লন টেনিস ক্লাবকেই নির্বাচিত করা হয় কারণ পৃষ্ঠপোষকরা মেলবোর্নকেই পছন্দ করতেন বেশি।
১৯৮৮ সালের টুর্নামেন্টে কুইয়ং লন টেনিস ক্লাব থেকে মেলবোর্ন পার্কে(পূর্বের ফ্লিন্ডার্স পার্ক) স্থানান্তর করা হয় এবং প্রথম রিবাউন্ড এইস সারফেসে খেলা হয়। এবছর ৯০ শতাংশ দর্শক বেড়ে যায়। [৭]
টুর্নামেন্টটি সাধারণত ডিসেম্বর বা ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হত। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরের পর ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবার কারণে ১৯৮৬ সালে এটি অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৮৭ সালের পর থেকে নিয়মিত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
জনিক সিনার , ২০২৪ সালে পুরুষ একক চ্যাম্পিয়ন। এটি ছিল তার প্রথম মেজর শিরোপা।
আরিনা সাবালেঙ্কা , ২০২৪ সালে মহিলা একক চ্যাম্পিয়ন। এটি ছিল তার দ্বিতীয় মেজর শিরোপা এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার দ্বিতীয় শিরোপা।
রোহন বোপান্না, ২০২৪ সালের বিজয়ী পুরুষদের দ্বৈত দলের অংশ ছিলেন। এটি ছিল তার প্রথম মেজর শিরোপা।
ম্যাথু এবডেন, ২০২৪ সালের বিজয়ী পুরুষদের দ্বৈত দলের অংশ ছিলেন। এটি ছিল তার দ্বিতীয় মেজর শিরোপা এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম শিরোপা।
এলিস মার্টেনস, ২০২৪ সালের বিজয়ী মহিলা দ্বৈত দলের অংশ ছিলেন। এটি ছিল তার চতুর্থ মেজর শিরোপা এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দ্বিতীয়।
সিয়েহ সু-ওয়েই, ২০২৪ সালের বিজয়ী মহিলা দ্বৈত এবং মিশ্র দ্বৈত দলের অংশ ছিলেন। মহিলাদের দ্বৈতে এটি তার সপ্তম মেজর শিরোপা এবং মিশ্র দ্বৈতে প্রথম মেজর শিরোপা।
জান জিলিস্কি, ২০২৪ সালের বিজয়ী মিশ্র দ্বৈত দলের অংশ ছিলেন। এটি ছিল তার প্রথম মেজর শিরোপা।
তথ্যসূত্র
↑"Prize Money"। australianopen.com। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪।